পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রাম্যসাহিত্য >哈 শক্তিকে অন্তত মানসলোকে স্থাপন করিয়া কল্পনার দ্বারা উপভোগ না করিয়া মানুষ থাকিতে পারে না। পার্থিব সমাজে যদি-বা বাধা পায় তবে দ্বিগুণ তীব্রতার সহিত অধ্যাত্মিক ভাবের মধ্যে তাহাকে আয়ত্ত করিতে চেষ্টা করে । বৈষ্ণবের গান যে দেখিতে দেখিতে সমস্ত ভারতবর্ষ ছাইয়া ফেলিয়াছে ইহাই তাহার প্রধান কারণ। বৈষ্ণবের গান স্বাধীনতার গান। তাহ জাতি মানে না, কুল মানে না। অথচ এই উচ্চুম্বলতা সৌন্দর্ধবন্ধনে হৃদয়বন্ধনে নিয়মিত। তাহ অন্ধ ইন্দ্রিয়ের উদভ্ৰাস্ত উন্মত্ততা মাত্র নহে। * হরগোরীকথায় দাম্পত্যবন্ধনে যেমন কতকগুলি বাধা বর্ণিত হইয়াছে, বৈষ্ণব গাথার প্রেমপ্রবাহেও তেমনি একমাত্র প্রবল বাধার উল্লেখ আছে, তাহ সমাজ । তাহা একাই এক সহস্ৰ । বৈষ্ণব পদাবলীতে সেই সমাজ-বাধার চতুর্দিকে প্রেমের তরঙ্গ উচ্ছসিত হইয়া উঠিতেছে। এমন-কি, বৈষ্ণব কাব্য-শাস্ত্রে পরকীয়া অনুরক্তির বিশেষ গৌরব বর্ণিত হইয়াছে। সে গৌরব সমাজ-নীতির হিসাবে নহে, সে কথা বলাই বাহুল্য । তাহা নিছক প্রেমের হিসাবে । ইহাতে যে আত্মবিস্মৃতি, বিশ্ববিস্কৃতি, নিন্দ ভয় লজ্জা শাসন সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ঔদাসীন্য, কঠিন কুলাচার লোকাচারের প্রতি অচেতনতা প্রকাশ পায় তদদ্বারা প্রেমে প্রচণ্ড বল, দুর্বোধ রহস্য, তাহার বন্ধনবিহীনতা, সমাজ-সংসার স্থান-কাল-পাত্র এবং যুক্তিতর্ক কার্যকারণের অতীত একটা বিরাট ভাব পরিস্ফুট হইয় উঠে। এই কারণে যাহা বিশ্বসমাজে সর্বত্রই এক বাক্যে নিন্দিত সেই অভ্ৰভেদ কলঙ্কচুড়ার উপরে বৈষ্ণব কবিগণ র্তাহীদের বর্ণিত প্রেমকে স্থাপন করিয়া তাহার অভিষেকক্রিয়া সম্পন্ন করিয়াছেন । এই সর্বনাশী, সর্বত্যাগী, সর্ববন্ধনচ্ছেদী প্রেমকে অধ্যাত্মিক অর্থে গ্রহণ করিতে না পারিলে কাব্য হিসাবে ক্ষতি হয় না, সমাজ-নীতি হিসাবে হইবার কথা । এইরূপ প্রেমগানের প্রচার সাধারণ লোকের পক্ষে বিপজ্জনক এবং সমাজের পক্ষে অহিতকর মনে হইতে পারে। কিন্তু ফলত তাহ সম্পূর্ণ সত্য নহে। o 囑