পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
শকুন্তলা।

কহিলেন, সখি! আমারও ঐ আশঙ্কাই হয়; ভাল, জিজ্ঞাসা করিতেছি। এই বলিয়া, তিনি শকুন্তলাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, প্রিয়সখি! তোমার শরীরের গ্লানি উত্তরোত্তর প্রবল হইয়া উঠিতেছে; অতএব আমরা তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করিতে চাই। শকুন্তলা কহিলেন, সখি! কি বলিবে বল। তখন অনসূয়া কহিলেন, তোমার মনের কথা কি, আমরা তাহার বিন্দু বিসর্গও জানি না; কিন্তু ইতিহাসকথায় বিরহী জনের যেরূপ অবস্থা শুনিতে পাই, বোধ হয়, তোমারও যেন সেই অবস্থা ঘটিয়াছে। সে যা হউক, কি কারণে তোমার এত অসুখ হইয়াছে বল; প্রকৃত রূপে রোগনির্ণয় না হইলে, প্রতীকারচেষ্টা হইতে পারে না। শকুন্তলা কহিলেন, সখি! আমার অত্যন্ত ক্লেশ হইতেছে, এখন বলিতে পারিব না। প্রিয়ংবদা কহিলেন, অনসূয়া ভালই বলিতেছে; কেন আপনার মনের বেদনা গোপন করিয়া রাখ? দিন দিন কৃশ ও দুর্বল হইতেছ। দেখ, তোমার শরীরে আর কি আছে; কেবল লাবণ্যময়ী ছায়ামাত্র অবশিষ্ট রহিয়াছে।

 রাজা অন্তরাল হইতে শ্রবণ করিয়া কহিতে লাগিলেন, প্রিয়ংবদা যথার্থ কহিয়াছে; শকুন্তলার শরীর নিতান্ত কৃশ ও একান্ত বিবর্ণ হইয়াছে। কিন্তু কি চমৎকার! এ অবস্থাতে দেখিয়াও, আমার মনের ও নয়নের অনির্বচনীয় প্রীতিলতা হুইতেছে।