পাতা:শকুন্তলা - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮৭৫).pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
শকুন্তলা।

সমুদয় বলিয়া পরিশেষে কহিয়াছিলে, শকুন্তলাসংক্রান্ত যে সকল কথা কহিলাম, সমস্তই পরিহাসমাত্র, বাস্তবিক নহে। আমিও নিতান্তু নির্বোধ, তোমার শেষ কথাই সত্য বলিয়া বিশ্বাস করিয়াছিলাম, এই নিমিত্ত আর কখনও সে কথা উত্থাপন করি নাই। বিশেষতঃ, প্রত্যাখ্যানদিবসে আমি তোমার নিকটে ছিলাম না; থাকিলেও বরং যাহা শুনিয়াছিলাম, বলিতাম! রাজা, দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া, বাষ্পাকুল লোচনে শোকাকুল বচনে কহিলেন, বয়স্য! কার দোষ দিব, সকলই আমার অদৃষ্টের দোষ! এই বলিয়া অত্যন্ত শোকাভিভূত হইলেন। তখন মাধব্য কহিলেন, বয়স্য! এরূপ শোকে অভিভূত হওয়া তোমার উচিত নহে। দেখ, সৎপুরুষেরা শোক মোহের বশীভূত হয়েন না। প্রাকৃত জনেরাই শোকে ও মোহে বিচেতন হইয়া থাকে। যদি উভয়ই বায়ুভরে বিচলিত হয়, তবে বৃক্ষে ও পর্ব্বতে বিশেষ কি? তুমি গম্ভীর স্বভাব, ধৈর্য্য অবলম্বন ও শোকাবেগ সংবরণ কর।

 প্রিয়বয়স্যের প্রবোধবাক্য শ্রবণ করিয়া, রাজা কহিলেন, সখে! আমি নিতান্ত অবোধ নহি, কিন্তু মন আমার কোনও ক্রমে প্রবোধ মানিতেছে না; কি বলিয়াই বা প্রবোধ দিব। প্রত্যাখ্যানের পর, প্রিয়া প্রস্থানকালে, সাতিশয় কাতরতা প্রদর্শনপূর্ব্বক, আমার দিকে যে বারংবার বাষ্পপূর্ণ দৃষ্টিপাত