পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য সংগ্ৰহ কেন মেজদি ? হেমাঙ্গিনী দৃঢ়তাবে মাথা নড়িয়া বলিলেন, না, তোকে আর আমি এখানে আসতে দেব না । না ডেকে পাঠালেও যদি আসিস তা হলে ভারি রাগ করব । কেষ্ট মুখপানে চাহিয়া সভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, তা হলে বল, কাল সকলে কখন ডেকে পাঠাবে ? 纜 কাল সকালেই তোর আসা চাই ? কেষ্ট অপ্রতিত হইয়া বলিল, আচ্ছ, সকালে না হয় দুপুরবেলায় আলব—ন মেজদি ? তাহার চোখে মুখে এমনই একটা ব্যাকুল অনুনয় ফুটিয়া উঠিল যে, হেমাঙ্গিনী মনে মনে ব্যথা পাইলেন । কিন্তু আর ত তাহার কঠিন না হইলে নয় । সবাই মিলিয়া এই নিরীহ একান্ত অসহায় বালকের উপর যে নির্ধ্যাতন শুরু করিয়াছে, কোন কারণেই আর ত তাহ বাড়াইয়া দেওয়া চলে না । সে হয়ত সহিতে পারে । মেজদির কাছে আসা-যাওয়া করিবার দণ্ড যত গুরুতর হোক সে হয়ত সহ করিতে পিছাইবে না ; কিন্তু তাই বলিয়া তিনি নিজে কি করিয়া সহিবেন ? হেমাঙ্গিনীর চোখ ফাটিয়া জল আসিতে লাগিল, তথাপি তিনি মুখ ফিরাইয়া রুক্ষস্বরে বলিলেন, বিরক্ত করিসনে কেষ্ট, যা এখান থেকে । ডেকে পাঠালে আলিস, নইলে যখন তখন এসে আমাকে বিরক্ত করিসনে । না, বিরক্ত করিনি ত, বলিয়া ভীত লজ্জিত মুখখানি হেঁট করিয়া তাড়াতাড়ি কেষ্ট উঠিয়া গেল। এইবার হেমাঙ্গিনীর দুই চোখ বহিয়া প্রস্রবণের মত জল ঝরিয়া পড়িতে লাগিল । তিনি স্থম্পষ্ট দেখিতে লাগিলেন, এই নিরুপায় অনাথ ছেলেটা মা হারাইয়া তাকেই মা বলিয়া আশ্রয় করিতেছে। উহারই আঁচলের অল্প একটুখানি মাথায় টানিয়া লইবার জন্ত কাঙালের মত কি করিয়াই না বেড়াইতেছে! হেমাঙ্গিনী চোখ মুছিয়া মনে মনে বলিলেন, কেষ্ট, মুখখানি অমন করে গেলি ভাই, কিন্তু তোর মেজদি যে তোর চেয়েও নিরুপায় । তোকে জোর করে বুকে টেনে আনবে, সে ক্ষমতা তার নেই ভাই । উমা আসিয়া কহিল, মা, কাল কেষ্ট মামা ভাগাদায় না গিয়ে, তোমার কাছে এসে বসেছিল বলে, জ্যাঠামশায় এমন মার মারলেন যে নাক দি— হেমাঙ্গিনী ধমকাইয়া উঠিলেন—আচ্ছা-হয়েচে—হয়েচে–ধা তুই এখান থেকে । অকস্মাৎ ধমকানি খাইয়া উমা চমকাইয়া উঠিল। আর কোন কথা না কহিয়া ধীরে ধীরে চুলিয়া যাইতেছিল ; মা ভাকিয়া বলিলেন, শোন রে! নাক দিয়ে কি খুব রক্ত পড়েছিল ? 惠●●