পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (অষ্টম সম্ভার).djvu/৩৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ পড়িয়া থাকিতাম ত কেবলমাত্র গতির অভাবেই বাঙলা-সাহিত্য জাজ মরিত। ' দেশের কল্যাণে একদিন তিনি নিজে প্রচলিত ভাষা ও পদ্ধতি পরিত্যাগ করিয়া পা বাড়াইতে ইতস্তত করেন নাই, তাহার সেই নির্ভীক কৰ্ত্তব্য বোধের দৃষ্টান্তকেই আজ যদি আমরা তাহার প্রবর্তিত সাহিত্য-স্বষ্টির চেয়েও বড় করিয়া গ্রহণ করিয়া থাকি ত সে র্তাহার মধ্যাদা-হানি করা নয়। এবং সত্যই যদি তাহার ভাষা, ধরণ-ধারণ, চরিত্র-স্বষ্টি, প্রভৃতি সমস্তই আমরা আজ ত্যাগ করিয়া গিয়া থাকি ত দুঃখ করিবারও কিছুই নাই। কৰাট পরিস্ফুট করিবার জন্ত একটা দৃষ্টান্ত দিতেছি। র্তাহার মধ্যায়৷ লঙ্ঘন করিতেছি, আশা করি এ কথা কাহারও মনে কল্পনায়ও উদয় হইবে না। ধরা যাক তাহার ‘চন্দ্রশেধর বই। শৈবলিনীর সম্বন্ধে লেখা আছে—“এমনি করিয়া প্রেম জন্মিল”। এই ‘এমনিট হইতেছে—নক্ষত্র দেখা, নৌকার পাল গণনা করা, মালা গাৰিয়া গাভীর শৃঙ্গে পরাইস্কা দেওয়া, আরও দুই-একটা কি আছে, আমার ঠিক মনে নাই। কিন্তু তাহার পরবর্তী ঘটনা অতিশয় জটিল । গঙ্গায় ডুবিতে যাওয়া হইতে আরম্ভ করিয়া সাহেবের নৌকা চড়িয়া পরপুরুষ কামনা করিয়া শ্বামিয়ূহ ত্যাগ করিয়া যাওয়া অবধি, সে সমস্তই নির্ভর করিয়াছে শৈবলিনীয় বাল্যকালে ‘এমনি করিয়া’ ষে প্রেম জন্সিয়াছিল, তাহারই উপর। তখনকার দিনে পাঠকেরা লোক । ভাল ছিল। এবং বোধ করি তখনকার দিনে সাহিত্যর শৈশবে ইহার অধিক গ্রন্থকারের কাছে তাহারা চাহে নাই, এবং এই দুষ্কৃতির জন্ত শেষকালে শৈবলিনীর যে-সকল শাস্তিভোগ হইয়াছিল তাহাতেই তাহারা খুশী হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু এধনকার দিনের পাঠকেরা অত্যন্ত তার্কিক, তাহারা গ্রন্থকারের মুখের কথায় বিশ্বাস করিতে চাহে না, নিজে তাহারা বিচার করিয়া দেখিতে চায় শৈবলিনী লোক কিরূপ ছিল, তাহার কতখানি প্রেম জন্মিয়াছিল, জন্মান সম্ভবপর কি না এবং এতবড় একটা অন্তায় করিবার পক্ষে সেই প্রেমের শক্তি যথেষ্ট কি না । প্রতাপ অতবড় একটা কাজ করিল, কিন্তু এখনকার দিনের পাঠক হয়ত অবলীলাক্রমে বলিয়া বসিবে—কি এমন আর সে করিয়াছে। শৈবলিনী পরস্ত্রী, গুরুপত্নী,—নিজের ঘরে পাইয়া তাহার প্রতি অত্যাচার করে নাই, এমন অনেকেই করে না, এবং করিলে গভীর অস্কার করা হয়। আর তার যুদ্ধের অজুহাতে আত্মহত্য ? তাহাতে পৌরুষ থাকিতে পারে, কিন্তু কাজ ভাল নয়। সংসারের উপরে, নিজের স্ত্রীর উপরে এই ৰে একটা অবিচার করা হইয়াছে, আমরা তাহা পছন্দ করি না। আর তাহার মানসিক পাপের প্রায়শ্চিত্ত ? তা আত্মহত্যার আবার প্রায়শ্চিত্ত কিসের ? অথচ, সেকালে আমি লোককে এই বলিয়া আশীৰ্ব্বা করিতে শুনিয়াছি, “তুমি প্রতাপের ভায় আদর্শপুরুষ হও।” মানুষের মতি-গতি কি বলাইরাই গেছে ! আর একটা চরিত্রের উল্লেখ করিয়া আমি এ-প্রসঙ্গ শেষ কৱিৰ। সে 'কৃষ্ণকাভের ote