পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই শশাঙ্কমোহন প্রশ্ন করিলেন, কি করেন তিনি ? উপেন্দ্র বলিলেন, কিছুই না ; কোনদিন যে কিছু করবে এ ভরসাও কারো নেই। এই সংবাদে শশাঙ্কমোহনের মনের উপর হইতে যেন একটা পাথর নামিয়া গেল। খুশী হইয়া বলিলেন, তাইতেই ! জ্যোতিত্ব এতক্ষণ চুপ করিয়া শুনিতেছিলেন, উপেক্সকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, কথাটি ঠিক হ’লে না, উপেন। শারীরিক উৎকর্ষটা কিছুই নয় নাকি ? তা ছাড়া আমি ত তার গানে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেছি। যা কিছু তিনি করেচেন, আমাদের এদেশে সে সম্মান যদি তার নাও মেলে, দুঃখের বিষয় সন্দেহ নেই, কিন্তু সে দোষ আমাদেরই—তার নয়। মকদ্দমার নথি-পত্র না ঘেটে, এটর্নির সঙ্গে ধস্তাধস্তি না করে, হাকিমের তাড়া না খেয়েও যার ষোল-আনা আদায় হয়েই আছে, সে যদি একটু এদিকে না তাকায় ত সংসারটা নিতান্ত মাড়ওয়ারির কাপড়ের দোকান হয়ে দাঁড়ায়। আমার ত তোমার বন্ধুটিকে দেখে সত্যিই হিংসা হয়। ভাল কথা, বৃদ্ধের আয় কত হে ? এই সময় সরোজিনী নিঃশবে ঘরে ঢুকিয় তাহার দাদার চৌকির পিঠের উপর ভর দিয়া দাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কার দাদা ? জ্যোতিষ বলিলেন, সতীশবাবুর বাবার। উপেন্দ্র বলিলেন, ঠিক জানি না, বোধ করি, প্রায় দু’লাখ । জ্যোতিষ দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিয়া উঠিল, রাজা না কি হে! উপেন্দ্র বলিলেন, না, রাজা নয়, তবে বরাবরই ওরা জমিদার। তার ওপর বৃদ্ধ বিশেষ করেই বৃদ্ধি করেচেন। জ্যোতিষ চোঁকিতে হেলান দিয়া পড়িয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, একেবারে সৌভাগ্যের প্রিয়তম পুত্র! স্বাস্থ্য, শক্তি, রূপ, ঐশ্বৰ্য্য ! মানুষ যা-কিছু কামনা করে, একাধারে সমস্তই । উপেন্দ্র হাসিতে লাগিলেন। শেষে বলিলেন, একটা মারাত্মক দোষও আছে । পরের দায় যেচে ঘাড়ে নিয়ে অসময়ে অপঘাতে মারা না পড়ে ত তুমি যা বলচ সে-সবই ঠিক বটে। জ্যোতিষ সোজা হইয়া বসিয়া বলিলেন, অপঘাতে মারা পড়বে কেন ? উপেন্দ্র বলিলেন, অসম্ভব নয়, এবং পূৰ্ব্বে হয়েও গেছে। রাগ পদার্থটি ওই দেহে যেমন ভয়ানক বেশী, প্রাণের মায়াটিও ঠিক তেমনি পরিমাণে কম। এই কলিযুগে বাল করেও যাদের অন্যায় অত্যাচারের ধারণাটা সত্যযুগের মতই থাকে, এবং রেগে উঠলে যাদের হিতাহিত বোধ থাকে না, তাদের বেঁচে থাকা না-থাকায় উপর আমি } e \r