পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

झब्रिुइँौन কৰাটের পার্থেই কিরণময়ী, সে তাহার হাসিমুখ একটুখানি বাহির করিয়া ভারি সমাদরের সহিত কহিল, এস ঠাকুরপো, দাড়িয়ে রইলে যে ! আবার সেই ঠাকুরপে। । লজ্জায় সঙ্গীশের মুখ রাঙা হইয়া উঠিল, কিন্তু, তখনই সামলাইয়া লইয়া বিনীতভাবে কহিল, আপনি দেখচি আমাকে এখনো মাপ করেননি । কিরণময়ী কহিল, না, তুমি ত মাপ চাওনি । চাইবার আগেই গায়ে পড়ে দিলে, মানী লোকের অমর্য্যাদা করা হয় ! অমৰ্য্যাদা করবার মত কম দামী জিনিষ ত তুমি নও ঠাকুরপো । তাহার এই প্রসন্ন রহস্তালাপের মধ্যেও এমন একটা গভীর করুণ স্পষ্ট হইয়া উঠিল যে, সতীশ আনতমুখে মৃত্ত্বকণ্ঠে কহিল, আমার কোন দাম নেই ধোঁঠাকরুণ ! আমার কোন অমৰ্য্যাদা হবে ন!—আমাকে আপনি মাপ করুন - কিরণময়ী একটুখানি হাসিয়া বলল, এমন জিনিস অনেক আছে ঠাকুরপো, যাকে ক্ষমা . করলেই তার শেষ হয়ে যায় । আজ তোমাকে ক্ষমা করতে গিয়ে যদি আবার সতীশবাবু বলে ডাকতে হয়, তা হলে বলে রাগচি ঠাকুরপো, সে-ক্ষমা তুমি পাবে না । তোমাকে ধরে রাখবার ঐ একটুখানি শেকল তুমি নিজে আমার হাতে তুলে দিয়েচ, সেটি যে মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ফিরিয়ে নেবে, তত নিৰ্ব্বোধ এই বৌঠাকরুণটি নয়। এই বলিয়া সে একটু বিশেষভালে ঘাড় নীড়িল । কিন্তু সতীশ চমকাইয়৷ উঠিল । এই শিকল-বাধা-বাধির উপমাটা তাহার ভাল লাগিল না, বরং হঠাৎ তাহার মনে হইল, তাহাকে অসাবধ ন পাইয়া এই মেয়েটি যেন সত্যই কিসের শক্ত শিকল তাহার পায়ে জড়াইয়া দিতেছে এবং মুহূর্বেই তাহার সমস্ত সহজবুদ্ধি আত্মরক্ষার্থে সাজিয়া দাড়াইল । বাটতে প্রবেশ করিবার সময় তাহার চক্ষে যে দৃষ্টি কৰ্ত্তন্যক্রটির ধিক্কারে কুষ্ঠিত ও লজ্জায় বিনম্র দেখাইয়াছিল, ধাক্কা খাইয় তাহা সন্দিগ্ধ ও তীব্র হইয়া উঠিল । কিরণময়ী কহিল, তোমার মুখ কিন্তু শুকিয়ে গেছে ঠাকুরপো, হয়ত এখনো জল খাওয়াও হয়নি ? এস, কিছু খাবে চল । সতীশ কিছুই না বলিয়া নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে প্রস্তুত হইল এবং এই সমস্ত রহস্তকৌতুকের কতটুকু শুধুই রহস্ত এবং কতটুকু নয়, অত্যন্ত সংশয়ের সহিত ইহাই বিচার করিতে সে এই রহস্যময়ীর অনুসরণ করিয়া চলিল । উপরে উঠিয়া বোঁ ফিরিয়া চাহিয়া বলিল, আজ বিকে নিয়ে মা কালীবাড়ি গেছেন । রান্নাঘরে বসে তুমি আমার লুচি বেলে দেবে, আমি ভেজে তুলব—পারবে ত ? বলিয়াই হাসিয়া উঠিয়া বলল, তুমি যে পারবে, সে তোমাকে দেখলেই বোঝা যায়—এস ।

  • > * ,