পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ উপেক্স অবাক হইয়া কহিল, তুমি ধাৰে ? - স্বরবালা অবিচলিতভাবে কহিল, বাব বৈকি! মেয়েমানুষের এ দুঃসময়ে কাছে থাকা মেয়েমানুষেরই কাজ—বলিয়া সে অনুমতির জন্য অপেক্ষা মাত্র না করিয়া পাশের ঘর হইতে চা আনিয়া হাজির করিল এবং দিবাকরকে সংবাদ দিয়া নিজে প্রভত হইবার জন্য শীঘ্ৰ বাহির হইয়া গেল ! গৃহস্থের ঘরে ঘরে যখন সবেমাত্র সন্ধ্যাদীপ জলিয়া উঠিয়াছে, ঠিক এমনি সময়ে তাহারা পাথুরেঘাটার বাড়িতে প্রবেশ করিল। সদর দরজা খোলা, কিন্তু নীচে কোথাও কেহ নাই। অন্ধকার ভাঙা বাড়ি শ্মশানের মত স্তব্ধ। উভয়কে সাবধানে অমুসরণ করিতে ইঙ্গিত করিয়া উপেন্দ্র নিঃশব্দে উপরে উঠিয়া হারানের রুদ্ধ কপাটের সামনে আসিয়া ক্ষণকালের জন্য স্তন্ধ হইয়া দাড়াইল । ভিতর হইতে শুধু একটা মৰ্ম্মভেদী দীর্ঘশ্বাস কানে আসিয়া বাজিল। কম্পিত-হস্তে দ্বার ঠেলিয়া চাহিতেই আঁধার শষ্যাতলে আপাদমস্তক বস্ত্রাচ্ছাদিত হারানের মৃতদেহ চোখে পড়িল। তাহার দুই পায়ের মধ্যে মুখ গুজিয়া সদ্য-বিধবা উপুড় হইয়া পড়িয়াছিল —সে একবার মাথা উচু করিয়া দেখিল এবং পরক্ষণেই বিদ্যুদ্বেগে উঠিয়া দাড়াইয়া আর্তকণ্ঠে মা বলিয়া চীংকার করিয়াই উপেন্দ্রর পদতলে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়া গেল এবং সেই মুহূর্তেই চক্ষের নিমিষে স্বরবালা উদভ্ৰান্ত হতবুদ্ধি স্বামীকে এক পাশে ঠেলিয়া দিয়া ঘরে ঢুকিয়া কিরণময়ীর মুখখানি কোলের উপর তুলিয়া লইল । Հն: অস্থি-মাংস-মেদ-মঙ্গা-রক্তে গঠিত এই মানবদেহে সমস্ত বস্তুরই একটা সীমা নির্দিষ্ট আছে। মাতৃ-স্নেহও অসীম নহে, তাহারও পরিমাণ আছে। গুরুতার অহৰ্নিশ অবিচ্ছেদে টানিয়া ফিরিয়া রক্ত-চলাচল যখন বন্ধ হইয়া আসিতে থাকে, তখন সেই সীমারেখার একাস্তে দাড়াইয়া জননীও আর সস্তানকে বহন করিয়া এক পদও অগ্রসর হইতে পারে না । তাহা স্নেহের অভাবে কিংবা ক্ষমতার অভাবে সে মীমাংসার ভার অন্তৰ্য্যামীর হাতে, মায়ের হাতে নয়। তাই সেদিন যখন হারানের মৃতদেহ মাতৃ-অক্ষচ্যুত হইয়া শ্বশানে চলিয়া গেল, তখন অম্বোরময়ীর বক্ষ তেদিয়া ষে দীর্ঘশ্বাস সেই অসীমেরই পদপ্রান্তে এই মৃত্যুর বার্তা বহন করিয়া লইয়া গেল, তাহ আরও কিছু সঙ্গে লইয়া গেল কি না, সে অনুমান করিবার সাধ্য মানুষের নাই। Héskr