পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কিরণময়ী বলিল, তার কারণ তুমি আমার গুরু। তোমার কাছে সমস্ত স্বীকার না করে আমি কোনমতেই শাস্তি পাব না। - উপেন্দ্র স্থির হইয়া রহিল। কিরণময়ী দৃঢ় অথচ মৃদু-স্বরে বলিতে লাগিল, —আমার মধ্যে যে গভীর অন্তর্দৃষ্টি দেখেছিলে ঠাকুরপো, সে চোখের ভুল নয়, সত্যি, কিন্তু সে বড় ক্ষণিকের। স্বামীকে আমি কোনদিন ভালবাসিনি, কিন্তু কায়মনে ভালবাসার চেষ্টা করতে শুরু করেছিলুম। কিন্তু, তিনি বঁাচলেন না, আমারও সে চেষ্টা স্থায়ী হ’লো না । বইয়ে এ-সব কথা পড়ে কখনো বা ভাবতুম মিছে কথা ; কখনো বা ভাবতুম কবির কল্পনা, কখনো বা মনে করতুম হয়ত আমার মধ্যে ভালবাসার শক্তি নেই বলেই এ-রকম মনে হয়। এ শক্তি আমার আছে কি না আজও জানিনে ঠাকুরপো, কিন্তু ভালবাসার সাধ যে আমার কত বেশী, সে-কথা প্রথমে টের পাই তোমাকে দেখে। তাই তুমিই গুরু । একটুখানি থামিয়া কতকটা যেন আত্মগতভাবেই কহিল, দুদিন পরে তোমরা চলে যাবে। আবার যখন দেখা হবে, তখন নিজের কথা বলবার মত মনের অবস্থা হয়ত থাকবে না । হয়ত এই বলার জন্তে তখন লজ্জায় মরে যাব । না ঠাকুরপো, সে হবে না, আজই তোমাকে আমার সমস্ত কথা শুনিয়ে দিয়ে তবে আমি নিরস্ত হ’ব । উপেন্দ্র কাতর হইয়া বলিল, খোঁঠান, আজ নানা কারণে আপনার মন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে আছে আমি দেখতে পাচ্ছি। এ অবস্থায় কি বলা উচিত, কি উচিত নয়, ভাবতে না পেরে—না না, বৌঠান, আমি অনুরোধ করচি, আর একদিন এ আপনার সমস্ত কথা শুনে যাব, কিন্তু আজ নয়। - কিরণময়ী কহিল, ঠিক এইজন্যেই ত আজই সমস্ত কথা শুমাতে চাই ঠাকুরপো । পাছে সেদিন লঙ্গ এসে বাধা দেয়, সাংসারিক ভাল-মন্দর বিচার-বুদ্ধি মুখ চেপে ধরে । আজ আমার রেখে-ঢেকে, বুঝে-সমঝে, সাজিয়ে-বঁচিয়ে বলবার সাধ্যও নেই, প্রবৃত্তিও নেই—আজই ত বলবার দিন । এর পরে হয়ত তুমি ইহজন্মে আর আমার মুখ দেখবে না,—তবু প্রার্থনা করি আরো কিছুক্ষণ এই দুৰ্ব্ব ছি, এই উন্মাদ মন আমার থাক্ ঠাকুরপো, আমি তোমার কাছে সমস্ত যেন খুলে বলতে পারি । তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া উপেন্দ্রর নির্মল শুদ্ধ সন্ত:করণ জানা ভয়ে এস্ত হইয়া উঠিল। শেষবারের মত বাধা দিয়া বলিল, বৌঠান, মানুষ মাত্রেরই গোপনীয় কথা থাকে। সে ত কারে কাছে খুলে দেবার আযগুকত নেই। বরঞ্চ প্রকাশ করাতেই বেশী অমঙ্গল । শুধু তোমার আমার নয়, জারো দশজনের। কিরণয়ী কোন উত্তর করিল না। লুটিগুলি ভাজা শেষ হইয়াছিল, একটি · »ኳዐ