পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন আসিয়া পা আর উঠে না, এমনি হইল। ধীরে ধীরে কোনমতে সে বাসার দরজার সম্মুখে আসিয়া চুপ করিয়া দাড়াইয়া বহিল। বাস নিন্তব্ধ। কোথাও কেহ যে জাগিয়া আছে এমন মনে হইল না এবং যদিচ সে জানিত, এত রাত্রে সাবিত্ৰী নিশ্চয়ই ঘরে ফিরিয়া গেছে, তথাপি দ্বারে ঘা দিতে, শব্দ করিতে সাহস হইল না। ভয় করিতে লাগিল, পাছে সে-ই আসিয়া দোর খুলিয়া দেয়। ঠিক এমনি সময়ে কবাট আপনি খুলিয়া গেল। একমুহূৰ্ত্ত সতীশ কথা কহিতে পারিল না, তাহার পরে বলিল, কে বেহারী ? ই বাৰু। সকলের খাওয়া হয়ে গেছে ? হয়েচে । ঝি চলে গেছে ? আজ্ঞে ই, আমাকে বসে থাকতে বলে এইমাত্র গেল । শুনিয়া সতীশ বাচিয়া গেল। খুশী হইয়৷ তাকে দরজা বন্ধ করিতে বলিয়া প্রফুল্লমুখে উপরে উঠিয়া গেল। বেহারী আসিয়া বলিল, বাবু, আপনার খাবার— খাবার থাক বেহারী— আমি খেয়ে এসেচি । বেহারী বলিল, আপনার পান, জল ওই টেবিলের উপর আছে । আচ্ছা, তুই শুগে যা। - বেহারী চলিয়া গেলে সতীশ বিছানায় শুইয়া পড়িল এবং তৎক্ষণাৎ ঘুমাইয়া श्रृंक्लिल । কলহ করিয়া অবধি সাবিত্রীর মন ভাল ছিল না। সতীশ তাহাকে কটুক্তি করিলেও ফিরাইয়া বলা যে তাহার উচিত হয় নাই, এই অনুতাপ তাহাকে সমস্ত জুপুরবেলাটা ক্লেশ দিয়াছিল। তাই সন্ধ্যার পরে কোন একসময়ে নিভৃতে ক্ষমা ভিক্ষা করিয়া লইবার আশায় অপেক্ষা করিতে করিতে যখন সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হইয়া গেল, তখন তাহার আশা আশঙ্কায় পরিণত হইতে লাগিল । সে জানিত এ কলিকাতায় বিপিন ভিন্ন সতীশের যাইবার স্থান নাই। তাই সৰ্ব্বাগ্রেই ভয় হইল পাছে সে সেই দলেই মিশিয়া থাকে। ক্রমশঃ রান্ত্রি বাড়িতে লাগিল, সতীশ আসিল না। আর কোথাও যাইবার কথা মনে করিতে না পারিয়া সংশয় যখন বিশ্বাসে দৃঢ় হইয়া উঠিল, তখন প্রতীক্ষণ করাও তাহার পক্ষে অসম্ভব হইয়া উঠিল। বণ্ডতঃ তাহার ঘৃণা বোধ হইতে 32