পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন সতীশ মুখ তুলিয়া বলিল, তোমার অপরাধ ? তা ছাড়া আমি ত জবাব দেবার কৰ্ত্ত নই, বাসা আমার একলার নয় । - সাবিত্ৰী বলিল, একলায় হলে জবাব দিতেন বোধ হয় । আচ্ছা, আমি না হয় নিজেই যাচ্চি । সতীশ উত্তর দিল না, মৌন হইয়া রহিল দেখিয়া সাবিত্রী মনে মনে অধিকতর জলিয়া উঠিয়া বলিল, আমি গেলে আপনি খুশী হন ? আপনার পায়ে পড়ি সতীশবাৰু, ই না, একটা জবাব দিন । তৰু সতীশ নিরুত্তর হইয়া রহিল। কারণ, সাবিত্রী যে এ-বাসার কতখানি, তাহ। সে জানিত এবং এমন করিয়! সে হঠাৎ চলিয়া গেলে কিছুই চাপ থাকিবে না, তখন সমস্ত কথাটা মুখে মুখে ঘাটাঘাটি হইতে হইতে কিরূপ জম্বন্ত আকার ধারণ করবে, তাহাই নিশ্চয় অনুমান করিয়া সে ভয় পাইয়া গেল। ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া যুদ্ধকণ্ঠে কহিল, আমাকে মাপ কর সাবিত্রী । যে ক'টা দিন আমি আছি, সে কীট। দিন অন্ততঃ তুমি কোথাও যেয়ে না। অন্য কোনো সময় হইলে সে তখনি ক্ষমা করিত, কিন্তু ইহার সম্বন্ধে সে নাকি একটা অমূলক সন্দেহ মনে মনে পোষণ করিতেছিল, তাই এই যুদ্ধ কণ্ঠস্বরকে ছলনা কল্পনা করিয়া নির্দয় হইয়া উঠিল এবং তাহারি গলার অনুকরণ করিয়া তৎক্ষণাৎ বলিয়া ফেলিল, আপনি এত আড়ম্বর করে মাপ চেয়ে সাধু হতে চাচ্চেন কিসের জন্যে ? আমার মত নীচ স্ত্রীলোকের আঁচল ধরে এই কি নূতন টেনেচেন যে লজ্জায় একেবারে মরে যাচ্চেন ? তার চেয়ে বাড়ি চলে যান, কলকাতায় থেকে মিথ্যে নষ্ট হবেন না। লেখাপড়। আপনার কাজ নয় । যে সতীশ উগ্র-প্রকৃতিতে কাহাকেও গ্রাহ করিত না, কথা সদ্ধ করা যাহার কোনদিন স্বভাব নয়, সে এখন এতবড় অপমানের কথাতেও নিৰ্ব্বাক হইয়া রাহুল । অপরাধী মন তাহার গুরুভারগ্রস্ত ভারবাহী জীবের মত এমনি নিরুপায়ভাবে পথের উপরে দুমড়াইয়া পড়িয়াছিল যে, সাবিত্রীর এই পুনঃ পুনঃ নিষ্ঠুর আঘাতেও সে কিছুতেই মাথা তুলিয়া দাড়াইতে পারিল না। সাবিত্রীর কিন্তু চমক ভাঙ্গিয়া গেল। তাহার স্পৰ্দ্ধ যে ক্রোধকেও ডিঙ্গাইয়া গেল, ইহা তাহার নিজের কানেও বাজিল। সে অনেকক্ষণ নিঃশব্দে দাড়াইয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল । 急》