পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ । জাজ সন্ধ্যার পর একপশলা ঝড়-বৃষ্টি হইয়া গেলেও আকাশে মেঘ কাটে নাই । উপেন্দ্র অনেকক্ষণ পরে ক্লান্ত চোখ দুটি মেলিয় আস্তে আস্তে কছিলেন, স্বমুখের জানালাট একটু খুলে দে দিদি, সেই বড় নক্ষত্রটি একবার দেখি । সাবিত্রী তাহার কপালের কক্ষ চুলগুলি ধীরে সরাইয়া দিতে দিতে মুম্বকণ্ঠে কহিল, গায়ে জোলো-হাওয়া-লাগবে যে দাদা । লীগুক না বোন। আর জামার তাতে ভয় কি ? তয় তাহার শুধু আজ কেন, যেদিন হইতে স্বরবালা গিয়াছে সেদিন হইতেই নাই। কিন্তু তাই বলিয়া সাবিীর ত ভয় ঘুচে নাই। তাহার বুঝি যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ জাশ ; তাই মৃত্যু যখন শিয়রের পাশে তাহার সঙ্গে সমান আসন দখল করিয়া বসিয়া গেছে, তখনও সে তুচ্ছ জোলে-হাওয়াটাকে পর্যন্ত ঘরে ঢুকিতে দিতে সাহস পায় না। অনিচ্ছুক-কণ্ঠে কছিল, কিন্তু নক্ষত্র ত দেখা যায় না দাদা, আকাশে যে মেঘ করে আছে । উপেন্দ্র স্নান চক্ষু-দুটি উৎসাহে বিস্ফারিত করিয়া বলিলেন, মেঘ ? আহা, অসময়ে মেঘ দিদি, খুলে দে, খুলে দে-—একবার দেখে নিই, আর ত দেখতে পাব না। বাহিরে আর্দ্র বায়ু জোরে বহিতেছিল ; সাবিত্রী কপালে বুকে হাত দিয়া দেখিল জর বাড়িতেছে ; মিনতি করিয়া বলিল, ভাল হও, কত মেঘ দেখবে দাদা,— বাইরে বড় বইচে, আজ আমি জানালা খুলতে পারব না। তাহার হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টানিয়া লইয়া উপেন্দ্র রাগ করিয়া বলিলেন, ভাল চাস তো খুলে দে সাবিত্রী, নইলে বর্ধার দিনে যখন মেঘ উঠবে, তখন কেঁদে কেঁদে মরবি তা বলে দিয়ে যাচ্চি । আমি আর দেখবার সময় পাব না । সাবিত্ৰী আর প্রতিবাদ না করিয়া একফোটা চোখের জল মুছিয়া উঠিয়া গিয়া জানালা খুলিয়া দিল । সেই খোলা জানালার বাইরে উপেজ নির্নিমেষ-চক্ষে চাহিয়া রছিলেন। আকাশের কোন এক অদৃপ্ত প্রাপ্ত হইতে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ ফুরিত হইতেছিল, তাহারি আলোকচ্ছটায় সম্মুখের গাঢ় মেঘ উদ্ভাসিত হইয়া উঠিতেছে, চাহিয়া চাহিয়া উপেন্দ্রর কিছুতেই যেন সাধ মিটে না এমনি মনে হইতে লাগিল । সাবিত্ৰী নিজেও একটা গরাদ ধরিয়া সেইদিকে চাহিয়াই চুপ করিয়া দাড়াইয়া ছিল, উপেন্দ্রর দৃষ্টি হঠাৎ তাহার উপরে পড়িতে মনে মনে একটু হাসিয়া বলিলেন, আচ্ছা দে দে, জানালা বদ্ধ করে দিয়ে কাছে এসে ব’ল। কিন্তু এত মায়া ত ভাল নয় দিদি। একটুখানি গায়ে হাওয়া লাগাতে দিতে চাও না, আমি চলে গেলে কি করবে বল ত ? éé ३