পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জানিয়া লইয়া নি গুয়ে রামান্বরের সম্মুখে ভাসিয়া গলা বড় করিয়া ডাক দিল, ঠাকুরমশাই, প্রাতঃপ্রেণাম হই । ঠাকুরমশাই গাঁজা খাইয়া দেওয়ালে ঠেস দিয়া চোখ বুজিয়া ধ্যান করিতেছিলেন, চমকাইয়া উঠিয়া বলিলেন, কল্যাণ হোক । তার পর মাথা সোজা করিয়া চোখ চাহিয়া বলিলেন, ও কে, বেহারী! জায় বোস। বেহার কাছে আসিয়া পদধূলি লইয়া বসিল। চক্রবর্তী গামছার খুঁট খুলিয়া খানিকট গাজা বাছির করিয়া বেহারীয় স্থাতে দিয়া বলিলেন, ও-বাসায় তা হলে রাধচে কে ? বেহারী উঠিয়া গিয়া হাতের তেলোয় ফোট কয়েক জল লইয়া ফিরিয়া আসিয়া বলিল, একটা খোট্ট বামুন। একেবারে জানোয়ার ! চক্রবর্তী খুশী হইয়া মাথা নাড়িয়া বলিলেন, ভগবান ওদের ল্যাজ দিতে তুলেচেন তাই যা! তাহার পরে বাসার নূতন হিন্দুস্থানী চাকরটাকে উদেশ্ব করিয়া বলিলেন, আমাদের এখানে কালই এক ব্যাটা ভূতকে ধরে আনা হয়েচে, তা সে— বিস্কে ওয়—তার সাক্ষী দ্যাখ না বেহারী, আজ সকালে এক-কলকে বার করে দিয়ে বললুম, কৈ তৈরী কর দেখি বাপু ! মনে করলুম, বিস্তেটা একবার দেখিই না। তা বললে বিশ্বাস করবিনে বেহারী, ব্যাট জিনিষটাকেই মাটি করে ফেললে । তা তোদের ওখানে কষ্ট হবে না, সাবিত্রী আমার চালাক মেয়ে, দুদিনেই শিখিয়ে-পড়িয়ে তালিম করে নেবে । র্তাহার নিজের পনর আনা ধিষ্ঠাও যে ঐ গুরুর কাছেই শেখা, সে-কথাটা চাপিয়া দিয়া তাড়াতাড়ি বলিলেন, কিন্তু তাও বলি বেহায়ী, হাড়ি ধরলেই হয় না, বাবুভায়াকে খুণী করা, তাদের পাতে রান্না তুলে দেওয়া, বড় সামান্ত বিষ্ঠে নয়—বামনায়ের জোর চাই ! ও খোট্টা-মোট্রার কৰ্ম্মই নয়। কিন্তু আমার এখানে কাজ করা আর পোষাবে না, সে তোকে আগে থেকেই বলে রাখলুম। তুই বলিস্ দেখি আমার নাম করে সাবিত্রীকে। সে তখনি বলবে, যাও বেহারী, চক্রবর্তীকে ডেকে আনো, না হয়, দুটাক মাইনে বেশী নেবে। সতীশবাবু কিন্তু কখখনো না বলবেন না। তার মেজাজ জানি ত। বিশেষ ব্ৰাহ্মণস্য ব্রাহ্মণ গতিং । আমি দুটাকা বেশী পেলে সে কিছু আর অপাত্রে পড়বে না, বলিয়া চক্রবর্তী নিজেই হাসিতে লাগিলেন। বেহারী অবাকৃ হইয়া রহিল। ক্ষণকাল পরে বলিল, ঠাকুরমশাই, সাবিত্ৰী ত ওখানে নেই। চক্রবর্তী অবিশ্বাসের হাসি হাপিয়া বলিলেন, আচ্ছা নেই নেই। তুই আমার নাম করে বলি, তার পরে যা হয় আমি দেখে নেব। or