পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মলিন ও শতচ্ছিন্ন শয্যার শিয়রে একটা মাটির প্রদীপ মিট্‌ মিটু করিয়া জলিতেছে, ঘরে অন্ত আলো নাই, এতটুকু আলো রক্তশূন্ত বিবর্ণ শীতল মুখের পরে লইয়া হারানের জীবন্ত মৃতদেহটা পড়িয়া আছে। স্কুর্যের উত্তাপ ও আকাশের বায়ু হইতে চিরদিন বিচ্ছিন্ন এই গৃহের অস্থিমজ্জায় যে জীর্ণতা ও অন্ধকার লালিত ও পুই হইয়া আসিয়াছে, এই কনকনে শীতের রাত্রে অত্যর আলোকে, কুষ্ঠরোগের মত তাহা সমস্ত দেয়ালের গায়ে ফুটিয়া পড়িয়াছে। এই দিবানিশি অবরুদ্ধ গৃহের রুদ্ধ দুষ্ট বায়ু আত্মঘাতীয় মুখোদগত বিষাক্ত ফেনার মত ফাপিয়া ফুলিয়া গৃহবাসীর কণ্ঠনালী যেন প্রতিমুহূর্বে রুদ্ধ করিয়া আনিতেছে। দ্বারে মৃত্যুদূতের প্রহরা পড়িয়াছে। সমস্ত দিকে চাহিয়া সতীশ বারংবার শিহরিয়া উঠিল । তাহার মনে হইতে লাগিল, সে চীৎকার করিয়া ছুটিয়া একেবারে রাস্তার উপর আসিয়া পড়িতে পারিলে বাচে, এখানে মাহুষের জীবন থাকে কি করিয়া ? অনতিদূরে বন্ধুটি দাড়াইয়াছিল, সেদিকে একবার চাহিয়াই সে আরো যেন ভয় পাইয়া গেল। কোথায় গেল ঐ অতুল রূপ ! কোথায় গেল ঐ হাসি ! তাহার দৃষ্টির সম্মুখে যেন কোন এক প্রেতলোকের পিশাচ উঠিয়া আসিল । সে ভাবিতে লাগিল, স্বামী যার এই, সে আবার হাসে, পরিহাসে যোগ দেয়, খোপা বাধে, টিপ পরে। এবং মুহূর্তের জন্তে তাহার সমস্ত নারীজাতির উপরেই ঘূণা জন্সিয়া গেল । এমন সময়ে হারান ডাকিলেন, কিরণ, উপীন এলেচে মা জানেন ? বধু কাছে আসিয়া ঝুঁকিয়া পড়িয়া আস্তে আস্তে বলিল, মা ঘুচ্ছেন। ডাক্তার বলে গেছেন ঘুমলে তাকে যেন জাগানো না হয়। হারান মুখ বিকৃত করিয়া চেঁচাইয়া উঠিল, চুলোয় যাক গে ডাক্তার, তুমি যাও বলে। গে তাকে । উপেন্দ্র নিকটে বসিয়া সমস্তই শুনিতে পাইতেছিলেন, ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, আজ রাত্রে জানিয়ে প্রয়োজন নেই হারানদা। কাল সকালে জানালেই হবে। উপেন্দ্ৰ বুঝিতে পাবিলেন, ক্রমাগত রোগে ভুগিয়া হারান অত্যন্ত খিটু খিটে হইয়া গিয়াছে। তাই, এই নিরপরাধিনী সেবাপরায়ণা বন্ধটির অকারণ তিরস্কারে একটা ব্যথা অনুভব করিয়া একটুখানি সানার ইঙ্গিত করিতে একবার তাহার মুখপানে চাহিয়া দেখিলেন। কিছুই দেখা গেল না। কিরণময়ীর আনত মুখে দীপের আলোক পড়ে নাই । - মুহূর্তমাত্র। পরক্ষণেই কুদ্ধ বধু দ্রুতপদে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। উপেজ বিমর্ষ হইয়া বসিয়া রছিলেন, এবং হারান পূর্বের মত হাপাইতে লাগিলেন। নিন্তব্ধ কক্ষ সতীশের কাছে আরও ভীষণ হইয়া উঠিল। অনতিকাল 协翁