পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত এত ভালবাসেন, কেহ এটাকে লইয়া গিয়া তাহাদের উপহার দিয়া আসে না কেন ? সন্ধ্যার প্রাক্কালে প্রত্যাবর্তন করিলাম, গিয়া দেখি সেখানে সমারোহ ব্যাপার । ঠাকুর ও ঠাকুরঘর সাজান হইতেছে, আরতির পরে কীৰ্ত্তনের বৈঠক বসিবে । পদ্মা কহিল, নতুনগোসাই, কীৰ্ত্তন শুনতে তুমি ভালোবাস, আজ মনোহরদাস বাবাজীর গান শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। কি চমৎকার! বস্তুত বৈষ্ণব-কবিদের পদাবলীর মত মধুর বস্তু আমার আর নাই, বলিলাম, সত্যিই বড় ভালোবাসি পদ্মা । ছেলেবেলায় দু-চার ক্রোশের মধ্যে কোথাও কীৰ্ত্তন হবে শুনলে আমি ছুটে যেতাম, কিছুতে ঘরে থাকতে পারতাম না। বুঝি না-বুঝি তবু শেষ পৰ্যন্ত বসে থাকতাম। কমললত, তুমি গাইবে না আজ ? কমললতা বলিল, না গোসাই, আজ না । আমার ত তেমন শিক্ষণ নেই, ওঁদের সামনে গাইতে লজ্জা করে । তা ছাড়া সেই অস্থখটা থেকে গলা তেমনই ধরে আছে, এখনো সারেনি । কহিলাম, লক্ষ্মী কিন্তু তোমার গান শুনতেই এসেচে। ও ভাবে আমি বুঝি বাড়িয়ে বলেচি । কমললতা সলজে কহিল, বাড়িয়ে নিশ্চয়ই বলেচ গোসাই । তারপরে স্মিতহাস্তে রাজলক্ষ্মীকে বলিল, তুমি কিছু মনে ক’রো না ভাই, সামান্ত যা জানি তোমাকে আর একদিন শোনাব । রাজলক্ষ্মী প্রসন্নমুখে কহিল, আচ্ছা দিদি, তোমার যেদিন ইচ্ছে হবে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে, আমি নিজে এসে তোমার গান শুনে যাব। আমাকে বলিল, তুমি কীৰ্ত্তন শুনতে এত ভালোবাস, কই আমাকে ত সে-কথা বলোনি ? উত্তর দিলাম, কেন বলব তোমাকে ? গঙ্গামাটিতে অসুখে যখন শয্যাগত, দুপুরবেলাটা কাটত শুকনো শূন্ত মাঠের পানে চেয়ে, দুর্ভর সন্ধ্য কিছুতে একলা কাটতে চাইত না— রাজলক্ষ্মী চট্‌ করিয়া আমার মুখে হাত চাপা দিয়া ফেলিল, কহিল, আর যদি বলে পায়ে মাথা খুড়ে মরব। তারপর নিজেই অপ্রতিভ হইয়া হাত সরাইয়া বলিল, কমললতাদিদি, বলে এসো ত ভাই তোমার বড়গোসাইজীকে, আজ বাবাজীমশায়ের কীৰ্ত্তনের পরে আমি ঠাকুরদের গান শোনাব। কমললতা সন্দিগ্ধকণ্ঠে বলিল, কিন্তু বাবাজীরা বড় খুতখুতে ভাই । রাজলক্ষ্মী কহিল, তা হোক গে, ভগবানের নাম ত হবে। বিগ্রহমুক্তিগুলিকে হাত দিয়া দেখাইয়া হাসিয়া বলিল, ওরা হয়ত খুশী হবেন, বাবাজীদের জন্যও তত ভাবিনে দিদি, আমার এই দুৰ্ব্বাস ঠাকুরটি প্রসন্ন হলে বাচি । S • *