পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত খুত করিতে লাগিল, হয়ত বা রাত্রে মাঝে মাঝে আসিয়া দেখিয়া গেল, কিন্তু আমার ঘুমের বিঘ্ন ঘটিল না। পরদিন শয্যা ত্যাগ করিয়া দেখিতে পাইলাম রাণীকৃত ফুল তুলিয়া উভয়ে ফিরিয়া আসিল । আমার পরিবর্তে কমললতা রাজলক্ষ্মীকে সঙ্গী করিয়াছিল। সেখানে নির্জনে তাহদের কি কথা হইয়াছে জানি না, কিন্তু আজ তাহাদের মুখ দেখিয়৷ আমি ভারী তৃপ্তিলাভ করিলাম যেন কতদিনের বন্ধু দু’জনে—তাহার কতকালের আত্মীয় । কাল উভয়ে একত্রে এক শয্যায় শয়ন করিয়াছিল, জাতের বিচার সেখানে প্রতিবন্ধক ঘটায় নাই। একজন অপরের হাতে খায় না এই লইয়া কমললতা আমার কাছে হাসিয়া বলিল, তুমি ভেবো না গোসাই, সে বন্দোবস্ত আমাদের হয়ে গেছে। আসচে বারে আমি বড় বোন হয়ে জন্মে ওর দুটি কান ভাল করে মলে দেল । রাজলক্ষ্মী বলিল, তার বদলে আমিও একটা সৰ্ত্ত করিয়ে নিয়েচি গোসাই । যদি মরি, ওঁকে বোষ্টমিগিরি ইস্তফা দিয়ে তোমার সেবায় নিযুক্ত হতে হবে । তোমাকে ছেড়ে আমি মুক্তি পাব না সে খুব জানি, তখন ভূত হয়ে দিদির ঘাড়ে চাপব—সেই সিন্ধবাদের দৈত্যের মত—কাধে বসে সব কাজ ওকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে তবে ছাড়ব । কমললতা সহাস্তে কহিল, তোমার মরে কাজ নেই ভাই, তোমাকে র্কাধে নিয়ে আমি সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতে পারব না। সকালে চা খাইয়া বাহির হইলাম গহরের খোজে। কমললতা আসিয়া বলিল, বেশী দেরি করে না গোসাই, আর তাকেও সঙ্গে এনে। এদিকে একজন বামুন ধরে এনেচি আজ ঠাকুরের ভোগ রাধতে । যেমন নোংরা তেমনি কুঁড়ে । রাজলক্ষ্মী সঙ্গে গেছে তার সাহায্য করতে । বলিলাম, ভালো করোনি । রাজলক্ষ্মীর আজ খাওয়া হবে বটে, কিন্তু তোমার ঠাকুর থাকবে উপবাসী । কমললতা সভয়ে জিভ কাটিয়া বলিল, অমন কথা ব’লো না গোসাই, সে কানে শুনলে এখানে আর জলগ্ৰহণ করবে না । হাসিয়া বলিলাম, চব্বিশ ঘণ্টাও কাটেনি কমললতা, কিন্তু তাকে তুমি চিনেচ । সেও হাসিয়া বলিল, ই গোঁসাই চিনেচি, শত-লক্ষেও এমন মানুষ তুমি একটিও খুঁজে পাবে না ভাই । তুমিও ভাগ্যবান । গহরের দেখা মিলিল না, সে বাড়ি নাই। তাহার এক বিধবা মামাতে৷ ভগিনী থাকে স্বনাম গ্রামে ; নবীন জানাইল সেদেশে কি এক নূতন ব্যাধি আসিয়াছে, লোক মরিতেছে বিস্তর। দরিদ্র আত্মীয়া ছেলেপুলে লইয়া বিপদে পড়িয়াছে, তাই সে গিয়াছে চিকিৎসা করাইতে । আজ দশ-বারোদিন সংবাদ নাই—নবীন ভয়ে > X >