পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নমুনা সেই প্রথমদিন সাঁইথিয়া স্টেশনে গাছতলাতেই দেখেছিলুম। তারপরে আর একটিও কখনো চোখে পড়ল না । আহা ! কথাগুলো যদি ঔর সামনেই বলতে আনন্দ ! আনন্দ কাজের লোক, কাজের উদ্যম ও শক্তি তাহার বিপুল । তাহকে কাছে পাইয়া রাজলক্ষ্মীর আনন্দের সীমা নাই | দিনেরাতে খাওয়ার আয়োজন ত প্রায় ভয়ের কোঠায় গিয়া ঠেকিল । অবিশ্রাম দু'জনের কত পরামর্শই যে হয় তাহার সবগুলো জানি না, শুধু কানে আসয়াছে যে গঙ্গামাটিতে একটা ছেলেদের ও একটা মেয়েদের ইস্কুল খোলা হবে । এখানে বিস্তর গরীব এবং ছোটজাতের লোকের বাস, উপলক্ষ বোধ করি তাহারাই ; শুনিতেছি একটা চিকিৎসার ব্যাপার ও চলিবে । এই সকল বিষয়ে কোনদিন আমার কিছুই পটুতা নাই। পরোপকারের বাসনা আছে কিন্তু শক্তি নাই, কোন কিছু একটা খাড়া করিয়া তুলিতে হইবে ভাবিলেও আমার শ্রান্ত মন আজ নয় কাল করিয়া দিন পিছাইতে চায়। তাহদের নূতন উদ্যোগে মাঝে মাঝে আনন্দ আমাকে টানিতে গিয়াছে, কিন্তু রাজলক্ষ্মী হাসিয়া বাধা দিয়া বলিয়ছে, ওঁকে আর জড়িয়ে ন| আনন্দ, তোমার সমস্ত সঙ্কল্প পণ্ড হয়ে যাবে। শুনিলে প্রতিবাদ করিতেই হয়, বলিলাম, এই যে সেদিন বললে আমার অনেক কাজ, এখন থেকে আমাকে অনেক কিছু করতে হবে! রাজলক্ষ্মী হাতজোড় করিয়৷ বলিল, আমার ঘাট হয়েচে গোসাই, অমন কথা আর কখনো মুখে আনব না । তবে কি কোনদিন কিছুই করব না ? কেন করবে না? কেবল অমুখ-বিমুখ করে আমাকে ভয়ে আধমরা করে তুলে না, তাতেই তোমার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব । আনন্দ কহিল, দিদি, সত্যিই ওঁকে আপনি অকেজো করে তুলবেন। রাজলক্ষ্মী বলিল, আমাকে করতে হবে না ভাই, যে-বিধাতা ওঁকে স্বষ্টি করেচেন, তিনিই সে ব্যবস্থা করে রেখেচেন—কোথাও ক্রটি রাখেননি। আনন্দ হাসিতে লাগিল । রাজলক্ষ্ম বলিল, তার ওপর এক গোণকার পোড়ারমুখে এমনি ভয় দেখিয়ে রেখেচে যে, উনি বাড়ির বা’র হলে আমার বুক টিপচিপ করে—যতক্ষণ না ফেরেন কিছুতে মন দিতে পারি নে । এর মধ্যে আবার গোণকার জুটলো কোথা থেকে ? কি বললে সে ? ծ 3էք