পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্তু কিন্তু এ ছাড়া আপনার কি আর চিন্তা নেই দিদি ? রাজলক্ষ্মী চুপ করিয়া রহিল। আনন্দ আমাকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, দাদার মত ভাগ্য সহসা চোখে পড়ে না । আমি ইহার উত্তর দিলাম, বলিলাম, এমন অকৰ্ম্মণ্য ব্যক্তিই কি সহসা চোখে পড়ে আনন্দ ? ভগবান তাদের হাল ধরবার মজবুত লোক দেন, নইলে তারা অকুলে ভেসে যায়—কোন কালে ঘাটে ভিড়তে পারে না । এমনি করেই সংসারে সামঞ্জস্য রক্ষা হয় ভায়া, কথাটা মিলিয়ে দেখো, প্রমাণ পাবে। রাজলক্ষ্মী একমুহূৰ্ত্ত নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া উঠিয়া গেল তাহার অনেক কাজ । ইহার দিন-কয়েকের মধ্যেই বাড়ির কাজ শুরু হইল ; রাজলক্ষ্মী জিনিসপত্র একটা ধরে বন্ধ করিয়া যাত্রর আয়োজন করিতে লাগিল ; বাড়ির ভার রাহুল বুড় তুলসীদাসের পরে । যাবার দিনে রাজলক্ষ্মী আমার হাতে একখান পোস্টকার্ড দিয়া বলিল, আমার চার পাতা জোড়া চিঠির এই জবাব এল—পড়ে দেখ । বলিয়া চলিয়া গেল । মেয়েলী অক্ষরে গুটিদুই-তিন ছত্রের লেখা । কমললতা লিখিয়াছে, মুখেই আছি বোন | যাদের সেবায় আপনাকে নিবেদন করেছি আমাকে ভালো রাখার দায় যে তাদের ভাই। প্রার্থনা করি তোমরা কুশলে থাকে । বড়গোসাইজ তাহার আনন্দময়ীকে এদ্ধা জানিয়েছেন । ইতি— শ্রীশ্রীরাধাকৃষ্ণচরণপ্রিতী—কমললত সে আমার নাম উল্লেখও করে নাহ। কিন্তু এই কয়টি অক্ষরের আড়ালে কত কথাই a তাহার রহিয়া গেল। খুজিয়া দেখিলাম একফোটা চোখের জলের দাগ কি কোথাও পড়ে নাই ; কিন্তু কোন চিহ্নই চোখে পড়িল না। চিঠিখানা হাতে করিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। জানাগার বাহিরে রৌদ্রওপ্ত নীলাভ আকাশ, প্রতিবেশী-গৃহের একজোড়া নারিকেল বৃক্ষের পাতার ফাক দিয়া কতকটা অংশ তাহার দেখা যায়, সেখানে অকস্মাৎ দুটি মুখ পাশাপাশি যেন ভাসিয়া আসিল । একটি আমার রাজলক্ষ্মী—কল্যাণের প্রতিমা ; অপরটি কমললতার— অপরিস্ফুট, অজানা—যেন স্বপ্নে দেখা ছবি। রতন আসিয়া ধ্যান ভাঙিয়া দিল, বলিল, স্বানের সময় হয়েচে বাবু, মা বলে দিলেন । স্বানের সময়টুকুও উত্তীণ হইবার জো নাহ। 38 y