পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত কিনা—তাই শুধু বলছিলাম। তা বেশ বেশ--এ একটা বাংলাদেশের কীর্তি হয়ে शांकटक् । কীর্তি ? নিজের মুখে কি আর বলব ভাই, আগে শোন, তারপরে হবে কথা । কোনদিক দিয়াই নিস্তার নাই। ক্ষণকাল স্থির থাকিয়া কতকটা যেন নিজের মনেই বললাম, সকাল থেকেই শরীরটা এমন বিত্র ঠেকচে যে মনে হচ্ছে মোতে পেলে— গহর কানও দিল না, বলিল,পুষ্পক-রথে সীতা যেখানে কঁদিতে কঁাদতে গয়না ফেলে দিচ্চেন সে জায়গাট যারা শুনেটে চোখের জল রাখতে পারেনি, একান্ত ! চোখের জল যে আমিই রাখিতে পারিব সে সম্ভাবনা কম ; বলিলাম, কিন্তু— গহর কহিল, আমাদের সেই বুড়ে নয়নৰ্চাদ চক্রবর্তীকে তোর মনে আছে ত, তার জালায় আমি আর পারিনে । যখন-তখন এসে বলবে, গহর, সেইথানটা একবার পড় দেখি, শুনি। বলে, বাবা, তুই কখনো মোছলমানের ছেলে নোসূ—তোর গায়ে আসল ব্ৰহ্মরক্ত স্বচক্ষে দেখতে পাচ্চি । নয়নচাদ নামটা খুব সচরাচর মেলে না, তাই মনে পড়িল । বাড়ি গহুরদের গ্রামেই। জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই চক্কোত্তি বুড়ে ত? যার সঙ্গে তোমার বাবার লাঠালাঠি মামলা-মোকদ্দমা চলছিল ? গহর বলিল, ই, কিন্তু বাবার সঙ্গে পারবে কেন—তার জমি, বাগান, পুকুর, মায় বাস্তুসমেত বাবা দেনার দায়ে নিলেম করে নিয়েছিল ; আমি কিন্তু তার পুকুর আর ভিটেট ফিরিয়ে দিয়েচি। ভারী গরীব-দিনরাত চোখের জল ফেলত, সে কি আর ভাল শ্রীকান্ত । - ভাল ত নয়ই। চক্ৰবৰ্ত্তীর কাব্য প্রীতিতে এমনি কিছু একটা আন্দাজ করিতেছিলাম, বলিলাম, এখন চোখের জল ফেলা থেমেচে ত ? গহর কহিল, লোকটি কিন্তু সত্যিই ভালোমানুষ । দেনার জালায় একসময়ে যা করেছিল অমন অনেকেই করে । ওর বাড়ির পাশেই বিঘে-দেড়েকের একটা আমবাগান আছে, তার প্রত্যেক গাছটাই চক্কোত্তির নিজের হাতে পোতা । নাতি-নাতনী অনেকগুলি, কিনে খাবার পয়সা নেই—তা ছাড়া আমার কেই-বা আছে, কেই-বা খাবে । সে ঠিক । ওটাও ফিরিয়ে দাও গে । দেওয়াই উচিত শ্ৰীকান্ত। চোখের সামনে আম পাকে, ছেলেপুলেগুলোর নিশ্বাস পড়ে—আমার ভারী দুঃখ হয় ভাই। আমের সময় আমার বাগানগুলো ত সব ব্যাপারীদের জমা করেই দিই—ও বাগানটা জার বিক্ৰী করিনে, বলি, চকোৰ্ত্তিমশাই, তোমার নাতিরা যেন পেড়ে খায়। কি বলিস্ রে, ভালো নয় ? ר