পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ চিকিৎসা হয়েছিল ? এখানে যা হবার সমস্তই হয়েছিল—কিছুতেই কিছু হ’লে না । বাবু নিজেই সব জানতে পেরেছিলেন । জিজ্ঞাসা করিলাম, আখড়ার বড় গোসাইজী আসতেন ? নবীন কহিল, মাঝে মাঝে । নবদ্বীপ থেকে র্তার গুরুদেব এসেচেন, তাই রোজ আসতে সময় পেতেন না । আর একজনের কথা জিজ্ঞাসা করিতে লজ্জা করিতে লাগিল, তবু সঙ্কোচ কটাক্টয়া প্রশ্ন করিলাম, ওখান থেকে আর কেউ আসক্ত ন নবীন ? নবীন বলিল, ই, কমললতা ? তিনি করে এসেছিলেন ? নবীন বলিল, রোজ ! শেষ তিনদিন তিনি খাননি, শোননি, বাবুর বিছনা ছেড়ে একবারটি উঠেননি । আর প্রশ্ন করিলাম না, চুপ করিয়া রহিলাম । নবীন জিজ্ঞাসা করিল, কোথায় যাবেন এখন—আখড়ায় ? ॐी । একটু দাড়াল, বলিয়া সে ভিতরে গিল্প একটা টিনের বক্স বাহির করিয়া আনিয়া আমার কাছে দিয়া বলিল, এটা আপনাকে দিতে তিনি বলে গিয়েচেন । কি আছে এতে নবীন ? খুলে দেখুন, বলিয়া সে আমার হাতে চাবি দিল । খুলি দেখিলাম দড়ি দিয়া বঁধ। তাহার কবিতার খাতাগুলা। উপরে লিখিয় ছে, প্রকাস্ত, রামায়ণ শেষ করার সময় হ’লে না। বড় গোসাইকে দিও, তিনি যেন মঠে রেখে দেন, নষ্ট না হয়। দ্বিতীয়টি লাল শালুতে বাধা ছোট পুটুলি । খুলিয়া দেখিলাম নানা মূল্যের একতাড় নোট এবং আমাকে লেখা আর একখানি পত্র । সে লিখিয়াছে-ভাই ঐক্যস্ত, আমি বোধ হয় বাচব না। তোমার সঙ্গে দেখা হবে কিনা জানিনে । যদি না হয় নবীনের হাতে বাক্সটি রেখে গেলাম, নিও। টাকাগুলি তোমার হাতে দিলাম, কমললতার যদি কাজে লাগে দিও । না নিলে যা ইচ্ছে ক’রে । আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন –গহর । দানের গৰ্ব্ব নাই, কাকুতি-মিনতি নাই । শুধু মৃত্যু আসন্ন জানিয়া এই গুটিকয়েক কথায় বাল্যবন্ধুর শুভ কামনা করিয়া তাহার শেষ নিবেদন রাখিয়া গিয়াছে। ভয় নাই, ক্ষোভ নাই, উচ্ছ্বসিত হা-হুতাশে মৃত্যুকে সে প্রতিবাদ করে নাই । সে কবি, মুসলমান ফকির-বংশের রক্ত তাহার শিরায়—শান্তমনে এই শেষ রচনাটুকু সে তাহার বাল্যবন্ধুর উদ্দেশে লিখিয়া গিয়াছে । এতক্ষণ পর্য্যন্ত চোখের জল আমার পড়ে নাই, কিন্তু আর তাহার। নিষেধ মানিল না, বড় বড় ফোটায় চোখের কোণ বাহিয়৷ গড়াইয়। পড়িল । ১৪৬