পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে বিষয়, বিষয়—আমার যে এদিকে সব বিষ হয়ে গেছে, তা কাকেই বা বোঝাই, কে বা বোঝে মধুসূদন । কবে নিস্তার করবে ! যা না, দাড়িয়ে রইলি কেন, আসতে বল গে । ভৃত্য অন্তৰ্হিত হইল, জ্ঞানদাও ও দিকে দরজার বাহিবে গিয়া চপকণ্ঠে জিজ্ঞাস করিল, এ বেলা কি তা হলে সত্যিই কিছু খাবেন না ? গোলোক মাথা নাড়িয়া কহিলেন, না। প্রভৃ গোকুল ঠাকুরের তিরোভাবের দিন একটা পৰ্ব্বদিন । ছোটগিনী, আমাদের মত সেকেলে লোক গুলো আজ ৭ এসব মেনে চলে বলেই তবু এখনো চন্দ্র-স্বৰ্য্য আকাশে উঠচে, জোয়াপ-ভঁটি নদীতে খেলচে । মধুসূদন ! তোমারই ইচ্ছা! জ্ঞানদা কহিল, তা হোক, একটু দুধ-গঙ্গাজল মুখে দিতে দোষ নেই। একটু শীগগির করে আসবেন, আমি নিয়ে বসে থাকব । এই ললিয়া সে অন্দরের কবাট রুদ্ধ করিয়া দিল । সম্মুখের দ্বার দিয়া ভৃত্যের পশ্চাতে একজন ভদ্র ব্যক্তি প্রবেশ করিলেন, গোলোক র্তাহাকে আহবান করিয়া কহিলেন, এসে চোঙদার, বসে। ভেবে মরি, একটা খবর দিতেও কি পারে না। ভূলে, যা, শূদ্রের হুকোয় শীগগির জল করে তামাক নিয়ে আয় । বিষ্ণু চোঙদার প্রণাম করিয়া গোলোকের পদধূলি লইয়া ফরাসের একধারে উপবেশন করিয়া প্রথমে একটা নিশ্বাস ফেলিলেন, তারপরে কহিলেন, দম ফেলবার ফুরস্বত ছিল না বড়কপ্ত, তা খবর! যাক, পাচশ আর তিনশ- এই আটশ জাহাজে তুলে দিয়ে তবে এলুম। আ:-কি হাঙ্গামা ! - দক্ষিণ আফ্রিকায় ছাগল ও ভেড়া চালান দিবার গোপন কারবারে এই বিষ্ণু চোঙদার ছিল তাহার অংশীদার। তিন মাসের মধ্যে তিন হাজার পশু যোগান দিবার সর্বে লেখাপড়া হইয়াছিল। তাই খবরটা শুনিয়া গোলোক খুশী হইলেন না। অপ্রসন্ন-মুখে বলিলেন, মোটে আটশ । কনটাক্টে ত তিন হাজারের—এখনো ৎ ঢের বাকী হে ! চোউদার ক্ষুব্ধ হইয়া কহিলেন, ছাগল-ভেড়া কি আর পাওয়া যাচ্চে বড়কর্তা, সব চালান, সব চালান-—এই আটশ যোগাড় করতেই যেন জিব বেরিয়ে গেছে। তবু ত হরেন রামপুর থেকে চিঠি লিখেছে, আট-দশদিনেই আরও পাঁচ-সাতশ রেলে পাঠাচ্চে, কেবল নাবিয়ে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া । আর সময় ত তিন মাসের—হয়েই যাবে নারায়ণের ইচ্ছেয় । গোলোক আশ্বস্ত হইয়া বলিলেন, তোমার উপরেই ভরসা। আমাকে ত এখন একরকম গেরস্ত-সন্ন্যাসী বললেই হয়—তোমার বৌঠাকরুণের মৃত্যুর পর থেকে টাকাকড়ি, বিষয়-আশয় একেবারে বিষ হয়ে গেছে। কেবল ঐ নাবালক ছেলেটার জন্তে । እ ዓ¢