পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে নেই-আচ্ছা প্যাটার্ন ফরমাস করেছিলে যা হোক, খুঁজে খুজে হয়রান । এই নাও ! এই বলিয়া সে পকেট হইতে একটা কাগজের মোড়ক বাহির কবিয়া সন্ধার হাতে গুজিয়া দিয়া বলিল, খুড়ীমা কই ? কাক বেরিয়েচেন বুঝি! গেল শনিবারে কিছুতেই বাড়ি আসতে পারলাম ন—তাই ওটা আনতে দেরি হয়ে গেল। কি বুনবে, পার্থী-পক্ষী, না ঠাকুর-দেবতা ? না গোলাপফুলের— সন্ধ্যা কহিল, সে ভাবনার ঢের সময় আছে ; কিন্তু যা আনতে সাতদিন দেরি হ'লে, তা দিতে কি ঘণ্টাখানেক সবুর সইত না ? ইস্টিসান থেকে বাড়ি না গিয়ে এখানে এলে কেন ? অরুণ সহস্তে কহিল, নওয়া-খাওয়া ত ? সে সন্ধ্যার পরে । কিন্তু ঘন ঘন এত অসুখ হতে লাগল কেন বল ত ? তাহার ‘সন্ধ্যা কথাটার প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন নিগূঢ় কটাক্ষ সন্ধ্যার কর্ণৰূলে আঘাত করিয়া একটুখানি রাঙা করিয়া দিগ, কিন্তু যেন লক্ষ্যই করে নাই এমনিভাবে সে রাগ করিয়া কছিল, তারই বা আর বাকী কি অরুণদা ? যাও, আর মিছিমিছি দেরি করতে হবে না। প্রত্যুত্তরে অরুণ পুনরায় হাসিয়া কি একটা বলিতে যাইতেছিল, কিন্তু জগন্ধাত্রীর মুখের দিকে চাহিয়া তাহার নিজের মুখের কথা মুখেই রহিয়া গেল। তিনি ক্রোধে সমস্ত মুখখান কালো করিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন এবং কস্তাকে লক্ষ্য করিয়া কহিলেন, পানটা আর চিবোসনে সন্ধ্যে, ওটা মুখ থেকে ফেলে দিয়ে যত পারিস্ হাসিতামাশা কর। বলিয়াই কাহার ও દ્ધષ્ઠિ দৃষ্টিপাত-মাত্র না করিয়া দ্রুতপদে ঘরে চলিয়া গেলেন । - * অকস্মাৎ কি যেন একটা কাণ্ড ধটিয়া গেল । অরুণ বজ্রাহতের ন্যায় নিশ্চল নিৰ্ব্বাক হইয়া রহিল এবং সন্ধ্যা বিবর্ণ হইয়া উঠিল। কিছুক্ষণের জন্য সায়াহ্নের আকাশতল হইতে সমস্ত আলো যেন একেবারে নিবিয়া গেল । কয়েক মুহূৰ্ত্ত একভাবে থাকিয়া, মুখের পান ফেলিয়া দিয়া, সহসা কঁদ-র্কাদ হইয়া বলিয়। উঠিল, কেন তুমি এ-বাড়িতে আর আস অরুণদা ? আমাদের সর্বনাশ না করে কি তুমি ছাড়বে না ? প্রথমটা অরুণ একটা কথাও কহিতে পারিল না, তারপরে ধীরে ধীরে শুধু বলিল, মুখের পান ফেলে দিলে সন্ধ্যা—আমি কি সত্যিই তোমার অস্পৃপ্ত ? সন্ধ্যা হঠাৎ কাদিয়া ফেলিয়া বলিল, তোমার জাত নেই—ধৰ্ম্ম নেই ; কেন তুমি আমাকে ছুয়ে দিলে ? আমার জাত নেই ? ধৰ্ম্ম নেই ? না নেই। তুমি বিলেত গেছ—তুমি মেচ্ছ। সেদিন মা তোমাকে পেতলের ঘটিতে জল খেতে দিয়েছিল, তোমার মনে নেই ? › ዓቕ