পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অরুণ দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিল, না, আমার মনে নাই। কিন্তু তোমার কাছে আজ আমি অস্পৃগু, মেচ্ছ ! সন্ধ্যা চোখ মুছিয়া কহিল, শুধু আমার কাছে নয়, সকলের কাছে। শুধু আজ নয়, যখন থেকে কারও নিষেধ শোনোনি—বিলেতে চলে গেলে, তখন থেকে । অরুণ কহিল, কিন্তু আমি মনে করেছিলাম— কিন্তু কি মনে করিয়াছিল তাহ আর বলিতে পারিল না । নিমেষমাত্র স্থির থাকিয়; কহিল, আমি আর হয়ত এ-বাড়িতে আসব না, কিন্তু আমাকে তুমি ঘৃণা ক'রো না সন্ধ্যা -- অামি ঘৃণিত কাজ কখনো করিনি । সন্ধ্যা কহিল, তোমার কি ক্ষিদে-তেষ্ট পায়নি অরুণদা ? তুমি কি দাড়িয়ে দাড়িয়ে কেবল ঝগড়াই করবে ? অরুণ কহিল, না, ঝগড়া আমি করব না। যে ঘৃণা করে, তার সঙ্গে মুখোমুখি দাড়িয়ে বিবাদ করবার মত ছোট আমি নই। এই বলিয়া অরুণ ধীরে ধীরে বাহির হইয়া গেল, —সন্ধ্যা সেইদিকে একদৃষ্টে চাহিয়া যেন পাষাণ-প্রতিমার ন্যায় বসিয়া রহিল । মা স্বমুখে আসিয়া প্রসন্নমুখে কহিলেন, যাক, আর বোধ হয় আসবে না। সন্ধ্যা চকিত হইয়া বলিল, না । মা বলিলেন, খামোক ছুয়ে দিলে, যা, কাপড়খানা ছেড়ে ফেল গে। সন্ধ্যা মায়ের মুখের প্রতি চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কাপড়খানা পর্য্যন্ত ছেড়ে ফেলতে হবে ? - তাহার মানমুখের অন্তরের ছবি জননীর চোখে পড়িল না, তিনি অশ্য হইয়া বলিলেন, হবে না ? খ্রষ্টেন মানুষ—বিধবা গিন্না-বান্ধী হলে যে নেয়ে ফেলতে হতো ! সেদিন রাস্কমালী—ই, বড়াই করে বটে—কিন্তু বিচের-আচার শিখতে হয় ত ওর কাছে । ভুলে-ছুড়ী ছুলে কি ছুলে না, তবু নাতনীটাকে অবেলায় ডুব দিইয়েই তবে দোরে তুললে ! সন্ধ্যা কহিল, বেশ ত মা যাচ্চি । মা ঘাড় নাড়িয়া বামনাই আচাব-বিচার সম্বন্ধে বোধ হয় আরও কিছু উপদেশ দিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু পিছন হইতে ডাক শুনিলেন, জগো, ঘরে আছিস গা ? গোলোক চাটুয্যেমশায় একেবারে উঠানের মাঝখানে আসিয়া পড়িয়াছিলেন ; জগদ্ধাত্রী ফিরিয়া চাহিয়া সাড়া দিলেন, ও মা, চাটুয্যেমামা যে ! কি ভাগ্য! কিন্তু সেদিনকার রাহমালী ও কন্যার ঘটনাটা স্মরণ করিয়া তাহার মুখ শুষ্ক হইয়া উঠিল। সন্ধ্যা উঠিয়া দাড়াইয়াছিল, গোলোক মায়ের উত্তর না দিয়া মেয়েকেই সম্ভাষণ করিলেন, সহস্তে কাহলেন, বলি আমার সন্ধ্যে নাতনী কেমন আছিস্ গো ? যেন রোগ দেখাচ্ছে না ? ծtre