পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত বলিলাম, বিশ্বাস করা যে শক্ত এটা তুমিও ত বোঝে ? গহর সহজেই স্বীকার করিয়া লইল ; কহিল, হুঁ, তাও বুঝি । একদিন সকালে তাহার রামায়ণের অশোকবনের অধ্যায়টা কিছুক্ষণ পড়ার পরে সে হঠাৎ বই মুড়িয়া আমার মুখের পানে চাহিয়া প্রশ্ন করিয়া বসিল, আচ্ছা ত্রকাস্ত, তুই কাউকে ভালোবেসেছিলি ? কাল অনেক রাত্রি জাগিয়া রাজলক্ষ্মীকে হয়ত আমার এই শেষ চিঠিই লিখিয়া ছিলাম। ঠাকুর্দার কথা, পুটুর কথা, তাহার দুর্ভাগ্যের বিবরণ সমস্তই তাহাতে ছিল । তাহাদিগকে কথা দিয়াছিলাম একজনের অনুমতি চাহিয়া লইব - সে ভিক্ষাও তাহাতে ছিল। পাঠান হয় নাই, চিঠিটা তখনও আমার পকেটে পড়িয়া । গহরের প্রশ্নের উত্তরে হাসিয়া বলিলাম, না । গহর কহিল, যদি কখনো ভালোবাসিস, যদি কখনো সেদিন আসে, আমাকে জানাস্ শ্ৰীকান্ত । জেনে তোমার কি হবে ? কিছুই না। তখন শুধু তোদের মধ্যে গিয়ে দিনকতক কাটিয়ে আসব। `श्वांश्छ्नः । আর যদি তখন টাকার দরকার হয় আমাকে খবর দিস্। বাবা অনেক টাকা রেখে গেছে, সে আমার কাজে লাগল না—কিন্তু তোদের হয়ত কাজে লেগে যাবে । তাহার বলার ধরণটা এমনি যে, শুনিলে ও চোখে জল আসিয়া পড়িতে চায় । বলিলাম, আচ্ছা, তাও জানাব। কিন্তু আশীৰ্ব্বাদ করে সে প্রয়োজন যেন না হয় । আমার যাবার দিনে গহর পুনরায় আমার ব্যাগ ঘাড়ে করিয়া প্রস্তুত হইল । প্রয়োজন ছিল না, নবীন ত লজ্জায় প্রায় আধমরা হইয়া উঠিল, কিন্তু সে কানও দিল না। ট্রেনে তুলিয়া দিয়া সে মেয়েমানুষের মত কাদিয়া ফেলিল, বলিল, আমার মাথার দিব্যি রইল শ্রীকাস্ত, চলে যাবার আগে আবার একদিন এসো, যেন আর একবার দেখা হয় । আবেদন উপেক্ষা করিতে পারিলাম না, কথা দিলাম দেখা করিতে আবার আসিব । কলকাতায় পৌছে কুশল সংবাদ দেবে বলে ? এ প্রতিশ্রুতিও দিলাম। যেন কত দূরেই না চলিয়াছি। কলিকাতার বাসায় গিয়া যখন পৌছিলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। চৌকাঠে পা দিয়াই যাহার সহিত সাক্ষাৎ ঘটিল সে জার কেহু নহে, স্বয়ং রতন । p t