পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষ্কৃতি যে ! ৰলিয়া টাকা লইয়া বাহিরে যাইতেছিল, হঠাৎ থামিয়া বলিল, আমাদের হরিদা যা গায়ে দিয়ে বাইরে যায়, দেখে আমারই লজ্জা করে । এখানে ঝুলে আছে, ওখানে কুঁচকে আছে,—ছি ছি, কি বিত্রই দেখায় । তারপর হাসিয়া হাত-পা নাড়িয়া বলিল, ঠিক যেন একটা পাশবালিশ হেঁটে যাচ্ছে ! ছেলের ভঙ্গী দেখিয়া নয়নতারা খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । নীলা মুখ ফিরাইয়া হালি চাপিতে লাগিল । হরিচরণ করুণচক্ষে ছোটখুড়ির মুখপানে চাহিয়া লজ্জায় মাথ৷ হেঁট করিল। সিদ্ধেশ্বরী নামেমাত্ৰ আহ্নিক করিতেছিল, ছেলের মুখ দেখিয়া ব্যথা পাইলেন। রাগ করিয়া বলিলেন, সত্যিই ত! ওদের প্রাণে কি সাধ-আহলাদ থাকতে নেই শৈল ? দে না, বাছাদের সব দুটো করে জামা-টামা তৈরী করিয়ে । অতুল মুকুব্বির মত হাত নাড়িয়া বলিল, আমাকে টাকা দাও জ্যাঠাইম, আমার দরজিকে দিয়ে দস্তুরমত তৈরী করিয়ে দেব—বাবা, আমাকে ফাকি দেবার জো নেই। নয়নতারা পুত্রের ইসিয়ারি সম্বন্ধে কি একটা বলিতে চাহিল, কিন্তু তাহার পূৰ্ব্বেই শৈল গম্ভীর দৃঢ়স্বরে বলিয়া উঠিল, তোমাকে জ্যাঠামো করতে হবে না বাবা, তুমি নিজের চরকায় তেল দাও গে। ওদের জামা তৈরী করবার লোক আছে। বলিয়া আঁচলে বাধা চাবির গোছ ঝনাৎ করিয়া পিঠে ফেলিয়া বাহির হইয়া গেল । নয়নতারা সক্রোধে বলিল, দিদি, ছোটবেীর কথা শুনলে ? কেন, কি অন্তায় কথাটা অতুল বলেচে শুনি ? সিদ্ধেশ্বরী জবাব দিলেন না । বোধ করি ইষ্টমন্ত্র জপ করিতেছিলেন, তাই শুনিতে পাইলেন না ! কিন্তু শৈল শুনিতে পাইল । সে দু’পা পিছাইয়া আসিয়া মেজজায়ের মুখের দিকে চাহিয়া বলিল, ছোটবেীর কথা দিদি অনেক শুনেচে–তুমিই শোননি। অতুল ছোটভাই হয়ে হরিকে যেমন করে ভাঙালে, আর তুমি খিলখিল করে হাসলে—ও আমার পেটের ছেলে হলে আজ ওকে জ্যান্ত পুতে ফেলতুম। বলিয়া নিজের কাজে চলিয়া গেল । ঘরবুদ্ধ সবাই স্তন্ধ হইয়া রহিল। খানিক পরে নয়নতারা একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বড়জাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, দিদি, আজ আমার অতুলের জন্মবার, আর ছোটবে। যা মুখে এল তাই বলে তাকে গাল দিয়ে গেল। সিদ্ধেশ্বরী দুই জায়ের কলহের স্বচনায় নিঃশব্দে সভয়ে ইষ্টনাম জপ করিতে লাগিলেন। নয়নতার জবাব না পাইয়া পুনরায় কহিল, তুমি নিজে কিছু না করে দিলে আমাদেরই যা হোক একটা উপায় করে নিতে হবে। רכיב