পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সিদ্ধেশ্বরী কহিতে লাগিলেন, ওর জন্যেই মণি অতুলকে আমন করে ঠ্যাঙালে। আচ্ছা সেও মেরেচে, ও-ও গাল দিয়েচে-চুকে-বুকে গেল, আবার কেন! আবার কেন ছেলেদের কথা কইতে নিষেধ করে দেওয়া! আজ তুমি মণি হরিকে ডেকে বলে দিয়ো—তারা যেন অতুলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, নইলে ওরা চলে গেলে যে পাড়ার লোকে আমাদের মুখে চুনকালি দেবে। সত্যিই ত আর ছোটবোঁয়ের জন্তে মায়ের পেটের ভাই-ভাজকে তুমি ছাড়তে পারবে না! তা ত নয়ই, বলিয়া তিনি আহার করিতে লাগিলেন । আচ্ছা, ছোটঠাকুরপো কি কোনদিন কিছু রোজগার করবার চেষ্টা করবে না ? এমনি করেই কি চিরকাল কাটাবে ? স্বামীর প্রসঙ্গ উথিত হইবামাত্রই শৈলজা কানে হাত দিয় দ্রুতপদে নিঃশব্দে প্রস্থান করিল। কৰ্ত্তা কি জবাব দিলেন, তাহা শুনিবার জন্য অপেক্ষা করিতে পারিল না। কান পাতিয়া এইসকল প্রসঙ্গ সে কোনদিনই শুনিত ন এবং শুনিতে ইচ্ছাও করিত না । কারণ, তাহার মনে যথেষ্ট আশঙ্কা ছিল, তাহার স্বামীর সম্বন্ধে আলোচনা অপ্রিয় ভিন্ন আর কিছুই হইবে না! অথচ সত্যকে সে আজীবন ভালবাসিত। তাহ প্রিয়ই হোক বা অপ্রিয়ই হোক বলিতে বা শুনিতে কোনদিনই মুখ ফিরাইত না। কিন্তু স্বামীর সম্বন্ধে কেমন করিয়া যে সে তাহার স্বভাবটিকে লঙ্ঘন করিয়া গিয়াছিল তাহা বলা স্বকঠিন । & সিদ্ধেশ্বরী যত বড় ক্রোধের উপরেই স্বামীর কাছে নালিশ করিতে শুরু করুন, শৈলকে দ্রুতপদে প্রস্থান করিতে দেখিয়া তাহীর চৈতন্য হইল—কাজটা অত্যস্ত বাড়াবাড়ি হইয়া গেল ! স্বামী লইয়া খোটা দিলে শৈলর দুঃখ এবং অভিমানের অবধি থাকিত না তাহা তিনি জানিতেন । স্ত্রীকে চুপ করিয়া যাইতে দেখিয়া কৰ্ত্ত মুখ তুলিয়া চাহিলেন এবং কহিলেন, আমি বেশ করে ধমকে দেব’খন । বলিয়া আহার সমাধা করিয়া পান চৰ্ব্বণ করিবার সময়টুকুর মধ্যেই সমস্ত বিশ্বত হইয়া গেলেন। বস্তুত: গিরীশের স্বভাবটা অদ্ভুত রকমের ছিল । আদালত-মোকদ্দমা ব্যতীত কিছুই তাহার মনে স্থান পাইত না । বাটীর মধ্যে কি ঘটিতেছে, কে আলিতেছে, কে ঘাইতেছে, কি খরচ হইতেছে, ছেলেরা কি করিতেছে, কিছুই তিনি তত্ত্ব লইতেন না। টাকা রোজগার করিতেন এবং ভালোমন্দ সব কথাতেই সায় দিয়া, যা হোক একটা মতামত প্রকাশ করিয়া কৰ্ত্তব্য সম্পাদন করিতেন । 象●●