পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষ্কৃতি ও সতেজ হইয়া উঠিল ; বলিলেন, মায়ের কাছ থেকে একখানা চিঠি এসেচে তা যে কারুকে দিয়ে একটুখানি পড়িয়ে শুনব, আমার সে জোটি পর্য্যস্ত নেই। পরকে খাওয়ানপরান আমার কিসের জন্য ? নীলা ছোটখুড়ীর কাছে বসিয়া তাহাকে সাহায্য করিতেছিল, সেখান হইতে কহিল, সে চিঠি যে মেজখুড়ীমা তোমাকে দু-তিনবার পড়ে শোনালেন মা ? আবার কবে নতুন চিঠি এল ? তুই সব কথায় গিল্পীপনা করতে যাসনে নীলা, বলিয়া মেয়েকে একটা ধমক দিয়া সিদ্ধেশ্বরী বলিলেন, চিঠি শুনলেই হ'লে । তার জবাব দিতে হবে না ? কেন, তোর ছোটখুড়ী কি মরেচে যে আমি ও-পাড়ার লোক ডেকে এনে চিঠির জবাব লেখাব ? নীলাও রাগ করিয়া বলিল, চিঠি লেখবার কি আর কেউ নেই মা যে, আজ সংক্রাস্তির দিনটায় তুমি খুড়ীমাকে মরিয়ে দিচ্চ ? আজ সংক্রাস্তি, সে কথাটা সিদ্ধেশ্বরীর মনে ছিল না । তিনি একমুহূর্তেই একেবারে পাংশু হইয়া বলিলেন, তুই যে অবাক করলি নীলা—বালাই, ষাট ! মরবার কথা আমি তাকে আবার কখন বললুম লা ? পেটের মেয়ে আমাকে মূখনাড়া দেয় ! কাল যার বিয়ে দিয়ে এনে কোলে-পিঠে মানুষ করলুম সে আমার ছায়া মাড়ায় না ; এত যে রোগে ভুগচি, তবুও ত আমার মরণ হয় না! আজ থেকে আর যদি একফোট ওষুধ খাই ত আমার অতি বড়— কান্নায় সিদ্ধেশ্বরীর কণ্ঠরোধ হইয়া গেল। তিনি আঁচলে চোখ মুছিতে মুছিতে নিজের ঘরে গিয়া একেবারে মডার মত বিছানায় শুইয়া পড়িলেন। নয়নতারা পাশের বাবান্দায় জানালার আড়ালে দাড়াইয়া সমস্তই দেখিতেছিল। এখন ধীরে ধীরে সিদ্ধেশ্বরীর ঘরে ঢুকিয়া তাহার পায়ের কাছে গিয়া বসিল । আস্তে আস্তে বলিল, একখানা চিঠির জবাব দেবার জন্য আবার তার খোশামোদ করতে যাওয়া কেন দিদি ? আমাকে হুকুম করলে ত দশখানা জবাব লিখে দিতে পারতুম। সিদ্ধেশ্বরী কথা কহিলেন না, পাশ ফিরিয়া দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়া শুইলেন । নয়নতারা একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল, তা হলে এখনি কি সেটা লিখে দিতে হবে দিদি ? সিদ্ধেশ্বরী হঠাৎ রুক্ষশ্বরে বলিয়া উঠিলেন, তুমি বড় বকাও মেজবোঁ । বলচি যে এখন থাক—তুমি পারবে না । তা না । নয়নতার রাগ করিল না। যেখানে কাজ আদায় করিতে হয়, সেখানে তার ক্রোধ অভিমান প্রকাশ পাইত না । সে নীরবে উঠিয়া গেল । বেলা দুট-আড়াইটার সময় সিদ্ধেশ্বরী মেয়েকে ডাকিয়া চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোর খুড়ীমা ভাত খেয়েচে রে ? 敦建* جايمسسهو