পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ না ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখচি, ভাবতে গিয়ে অনেক সময় ভয় হয় বুঝি-বা আমি পাগল হয়ে যাব। তখন সমস্ত ভুলে র্যাকে ধ্যান করতে বসি তার নাম বলা চলে না । কাউকে বলতেও নেই। তার ক্ষমাই আমার জগদীশ্বরের ক্ষমা। এতে ভুল নেই, সন্দেহ নেই, এখানে আমি নির্ভয় । ই, বলছিলুম, তারপরে, এলো আমার দুর্দিনের রাত্রি, কলঙ্কে দিলে দু'চোখের সকল আলো নিবিয়ে । কিন্তু সেই কি মানুষের সমস্ত পরিচয় ? সেই অখণ্ড মানির নিরবকাশ আবরণের বাইরে তার কি আর কিছুই বাকী নেই ? আছে । অব্যাহত অপরাধের মাঝে মাঝে তাকে আমি বার বার দেখতে পেয়েচি। তাই যদি না হ’তো, বিগত দিনের রাক্ষসট যদি আমার অনাগতের সমস্ত মঙ্গলকে নিঃশেষে গিলে খেতে, তবে তোমাকে ফিরে পেতুম কি করে । আমার হাতে এনে আবার তোমাকে দিয়ে যেতো কে ? আমার চেয়ে তুমি চার-পাঁচ বছরের বড়, তবু তোমাকে যা মানায় আমাকে তা সাজে না । বাঙালী-ঘরের মেয়ে আমি, জীবনের সাতাশটা বছর পার করে দিয়ে আজ যৌবনের দাবী আর করিনে। আমাকে তুমি ভুল বুঝে না—ষত অধমই হই, ওকথা যদি যুণাক্ষরেও তোমার মনে আসে তার বাড়া লজ্জা আমার নেই। বন্ধু বেঁচে থাক, সে বড় হয়েছে, তার বৌ এসেচে—তোমার বিয়ের পরে তাদের মুমুখে বার হবে। আমি কোন মুখে ? এ অসম্মান সইব কি করে ? যদি কখনো অমুখে পড়ে দেখবে কে-পুডু ? আর আমি ফিরে আসব তোমার বাড়ির বাইরে থেকে চাকরের মুখে খবর নিয়ে ? তারপরেও বেঁচে থাকতে বলো নাকি ? হয়ত প্রশ্ন করবে, তবে কি এমনি নিঃসঙ্গ জীবনই চিরদিন কাটাব ? কিন্তু প্রশ্ন যাই হোক, এর জবাব দেবার দায় আমার নয়, তোমার। তবে নিতান্তই যদি ভেবে না পাও, বুদ্ধি এতই ক্ষয়ে গিয়ে থাকে, আমি ধার দিতে পারি, শোধ দিতে হবে না,-কিন্তু ঋণটা অস্বীকার ক’রে না যেন । - তুমি ভাবে গুরুদেব দিয়েচেন আমাকে মুক্তির মন্ত্র, শাস্ত্র দিয়েচে পথের সন্ধান, সুননা দিযেচে ধর্মের প্রবৃত্তি, আর তুমি দিয়েচ শুধু ভার বোঝা । এমনই অন্ধ তোমরা। জিজ্ঞেস করি, তোমাকে ত ফিরে পেয়েছিলুম আমার তেইশ বছর বয়সে, কিন্তু তার আগে এরা সব ছিলেন কোথায় ? তুমি এত ভাবতে পার, আর এটা ভাবতে পারো না ? আশা ছিল একদিন আমার পাপ ক্ষয় হবে, আমি নিষ্পাপ হবো। এ লোভ কেন জানো 7 স্বর্গের জন্তে নয়, সে অামি চাইনে । আমার কামনা, মরণের পরে ধেন আবার এসে জন্মাতে পারি। বুঝতে পারো তার মানে কি ? ●