পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রছ যাইবার সময় সিদ্ধেশ্বরী অত্যন্ত মৃত্নকণ্ঠে বলিলেন, ছেলে দুটোকে,—বলিয়াই হঠাৎ কাদিয়া ফেলিলেন । আচ্ছা, আচ্ছ, সে হবে, বলিয়া গিরীশ বাহির হইয়া পড়িলেন । কিন্তু কি হবে, তাহা স্বামী-স্ত্রীর কেহই বুঝিলেন না। নয়নতারা গা টিপিয়া সিদ্ধেশ্বরীকে অস্তরালে ডাকিয়া কহিল, ও-বাড়িতে কিছু খেতে-টেতে বটুঠাকুরকে মানা করে দিলেন না কেন ? সিদ্ধেশ্বরী আশ্চর্ষ্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, কেন ? নয়নতারা মুখখান বিকৃত-গজীয় করিয়া বলিল, বলা যায় কি দিদি ! সিদ্ধেশ্বরীর চোখ দিয়া তখনও জল পড়িতেছিল । আঁচলে মুছিয়া ফেলিয়া একটু খানি চুপ করিয়া বলিলেন, সে তুমি পার মেজবোঁ । শৈলর গলা কেটে ফেললেও সে তা পারবে না । বলিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন । মোকদমার তদবির করিতে দুই-একদিন পূৰ্ব্বে জেলায় যাইবার জন্য রমেশ ঘরের মধ্যে প্রস্তুত হইতেছিল। শৈল সেখানে ছিল না। সে ঠাকুর-ঘরের মধ্যে দেহ হইতে তাহার সর্বশেষ অলঙ্কারখানি খুলিয়া ফেলিয়া জাহ্নু পাতিয়া বসিয়া গলবস্ত্র, যুক্তকরে মনে মনে বলিতেছিল, ঠাকুর, আর ত কিছু নাই ; এইবার যেমন করিয়া হোক আমাকে নিস্কৃতি দাও । আমার ছেলেরা না খাইয়া মরিতেছে, আমার স্বামী দুশ্চিস্তার কঙ্কালসার হইতেছেন— ওরে কেনো—ওরে পটলি— শৈল চমকিয়া উঠিল—এ যে তাহার ভাণ্ডরের কণ্ঠস্বর 1 জানালার ফাক দিয়া দেখিল, তিনিই বটে। পাকা চুল, কাচা-পাকা গোফ, সেই শান্ত স্নিগ্ধ সৌম্যমূৰ্ত্তি । চিরকালটি যেমন দেখিয়া আসিয়াছে, ঠিক তাই। কোন অঙ্গে এতটুকু পরিবর্তন ঘটে নাই। কানাই পড়া ফেলিয়া ছুটিয়া আসিয়া প্রণাম করিল, পটল খেলা ছাড়িয়া স্থাপাইতে ছাপাইতে উপস্থিত হইল। তাহাকে তিনি কোলে তুলিয়া লইলেন! রমেশ ঘর হইতে বাহির হইয়া পদধূলি গ্রহণ করিল। গিরীশ কহিলেন, এমন সময় কোথায় যাওয়া হবে ? রমেশ কুষ্ঠিত অস্পষ্টস্বরে বলিল, জেলায়— গিরীশ চক্ষের পলকে বারুদের মত প্ৰজলিত হইয়া উঠিলেন-হতভাগা, লক্ষ্মীছাড়া, তুমি আমার খাবে-পরবে আর আমারই সঙ্গে মামলা করবে ? তোমাকে এক সিকি পয়সার বিষয়-আশয় দেব না-দুর হও আমার বাড়ি থেকে ; এখখুনি দূর হও—এক মিনিট দেরি নয়—এক কাপড়ে বেরিয়ে যাও—

ዓፄ