পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজয়া টাকাটা দিয়ে সেই মাইক্রস্কাপট ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পাৰি। রাস। টাকাটা দিয়ে ? বেশ তো, বেশ তো—নিয়ে গেলে না কেন ? নরেন। বিজয়া দিলেন না । বললেন, তার দাম চারশো টাকা–এর এক পয়সা কম হবে না । রাস । সে কি কথা নরেন ? দুশো টাকার বদলে চারশে টাকা । বিশেষতঃ তাতে যখন তোমার এত দরকার অথচ তার কোন প্রয়োজন নেই। নরেন । ভেবেছি তাকে চারশো টাকা দিয়েই আমি নিয়ে যাৰ । রাস। না, সে কোনমতেই হতে পারে না। এত বড় অধৰ্ম্ম আমি সইতে -পারব না। ও আমার ভাবী পুত্রবধু, এ অন্যায় যে আমাকে পর্য্যস্ত স্পর্শ করবে নরেন । ( ক্ষণকাল অধোমুখে নিঃশব্দে থাকিয়া ) একটা কথা আমি বার বার ভেবে দেখেচি । তোমার সঙ্গে ওর কথাবার্তায়, বাইরের আচরণে আমি দোষ দেখতে পাইনে, কিন্তু অস্তরে কেন তোমার প্রতি এত ক্রোধ ! কেবল যে তোমার ঐ বাড়িটার ব্যাপারেই দেখতে পেলাম তাই নয়, এই microscope-টার ব্যাপারে ঢের বেশী চোখে পড়ল! ওটা নিতে আমার নিজেরই আপত্তি ছিল শুধু যে দরকার নেই বলেই তা নয়,-ওতে তোমার নিজেরই অনেক বেশী প্রয়োজন বলে। কিন্তু যখনি টের পেলাম তোমার টাকার প্রয়োজন, যখনি কানে এল তোমাকে কথা দেওয়া হয়েছে, তখনি সঙ্কল্প আমার স্থির হয়ে গেল । ভাবলাম, দাম ওর যাই হোক কিন্তু টাকা দিতেই হবে, কিছুতে অন্যথা করা চলবে না । মনে মনে বললাম, বিজয়া যখন ইচ্ছে, যতদিনে ইচ্ছে আমাকে টাকা শোধ দিন, কিন্তু আমি বিলম্ব করতে পারব না। তাই তোমাকে দুশো টাকা সকালেই পাঠিয়ে দিলাম। এ যে আমার কর্তব্য। সত্যরক্ষা আমাকে যে করতেই হবে । নরেন । সামান্ত দুশো টাকা দেবারও বুঝি ওঁর ইচ্ছে ছিল না ? বিশ্বাস ছিল ঠকিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ? রাস । ( জিভ কাটিয়া ) না না না । কিন্তু সে বিচারে আর তো প্রয়োজন নেই নরেন। কিন্তু তাই বলে এ কি অসঙ্গত প্রস্তাব ! এ কি অন্যায় ! দুশোর বদলে চারশো ! না বাবা, এ তাকে আমি কোনমতে করতে দেব না, তুমি দুশো টাকা দিয়েই তোমার জিনিস ফিরিয়ে নিয়ে যেও । * নরেন। না রাসবিহারীবাবু, আমার হয়ে আপনি তাকে অনুরোধ করবেন না। তিনি ভাল হলে জানাবেন তাকে চারশো টাকাই এনে দেব—ৰ্তার এতটুকু অনুগ্রহ আমি গ্রহণ করব না। বিলাসবাবুকে বলবেন তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন— এত কথা আমি কিছুই জানতুম না। কিন্তু আর না—আমার গাড়ির সময় হয়ে ।