পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত বৈষ্ণবী বলিল, ই, একেই বলি সাধন । দাসদাসীর এর চেয়ে বড় সাধনা আমরা পাব কোথায় গোঁসাই ? বলিতে বলিতে তাহার সঙ্গল চোখ দুটি যেন অনিৰ্ব্বচনীয় মাধুর্ঘ্যে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। আমার হঠাৎ মনে হইল, এই অপরিচিত বৈষ্ণবীর মুখের মত মুন্দর মুখ আমি সংসারে কখনো দেখি নাই । বলিলাম, কমললত, তোমার বাড়ি কোথায় ? বৈষ্ণবী আঁচলে চোখ মুছিয়া হাসিয়া বলিল, গাছতলায় । কিন্তু গাছতলা ত আর চিরকাল ছিল না ? বৈষ্ণবী কহিল, তখন ছিল ইট-কাঠের তৈরী কোন একটা বাড়ির ছোট্ট একটি ঘর। কিন্তু সে গল্প করার ত এখন সময় নেই গোসাই ! এস ত আমার সঙ্গে, তোমার নতুন ঘরটা দেখিয়ে দিই। চমৎকার ঘরখানি । বাশের আলনায় একটি পরিষ্কার তসরের কাপড় দেখাইয়া দিয়া কহিল, ঐট পরে ঠাকুরঘরে এস। দেরি করে না যেন । এই বলিয়। সে দ্রুত চলিয়া গেল । একধারে ছোট একটি তক্তপোশে পাতা বিছানা। নিকটেই জলচৌকির উপরে রাখা কয়েকখানি গ্রন্থ ও একথালা বকুলফুল ; এইমাত্র প্রদীপ জালিয়া কেহ বোধ হয় ৰূপধুনা দিয়া গিয়াছে, তাহার গন্ধ ও ধোয়ায় ঘরটি তখনও পূর্ণ হইয়া আছে– ভারী ভাল লাগিল । সারাদিনের ক্লাস্তি ত ছিলই, ঠাকুর-দেবতাকেও চিরদিন পাশ কাটাইয়া চলি, সুতরাং ওদিকের আকর্ষণ ছিল না,—কাপড় ছাড়িয়া ঝুপ করিয়া বিছানায় গুইয়া পড়িলাম ! কি জানি এ কাহার ঘর, কাহার শয্যা, অজ্ঞাত বৈষ্ণবী একটা রাত্রির জন্য আমাকে ধার দিয়া গেল—কিংবা হয়ত, এ তাহার নিজেরই—কিন্তু এসবল চিস্তায় মন আমার স্বভাবতঃই ভারী সঙ্কোচ বোধ করে, অথচ আজ কিছু মনেই হইল না, যেন কতকালের পরিচিত আপনার জনের কাছে হঠাৎ আসিয়া পড়িয়াছি । বোধ হয় একটু তন্দ্রাবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছিলাম, কে ষেন দ্বারের বাহিরে ডাক দিল, নতুনগোসাই, মন্দিরে যাবে না ? ওঁরা তোমাকে ডাকচেন যে | খড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিলাম । মন্দিরা-সহযোগে কীৰ্ত্তন-গান কানে গেল, বহুলোকের সমবেত কোলাহল নয়, গানের কথাগুলি যেমন মধুর তেমনি সুস্পষ্ট । বামাকণ্ঠ, রমণীকে চোখে না দেখিয়াও নিঃসন্দেহে অনুমান করিলাম এ কমললতা। নবীনের বিশ্বাস এই মিষ্ট স্বরই তাহার প্রভুকে মজাইয়াছে। মনে হইল—অসম্ভব নয় এবং অত্যন্ত অসঙ্গতও নয় । 8? سا ---) s