পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই বলে । নইলে নিজেদের গরজ নেই, থাকলে যে তুম না, না খেয়ে শুকিয়ে মরলেও না । কমললতা, তোমার দেশ কোথায় ? কালকেই ত বলেচি গোসাই, ঘর আমার গাছতলায়, দেশ আমার পথে-পথে । তা হলে গাছতলায় আর পথে-পথে না থেকে মঠে থাকো কিসের জন্য ? অনেকদিন পথে-পথেই ছিলুম গোসাই, সঙ্গী পাই ত আবার একবার পথই সম্বল করি । বলিলাম, তোমার সঙ্গীর অভাব এ-কথা ত বিশ্বাস হয় না, কমললতা । যাকে ডাকবে সেই যে রাজী হবে । বৈষ্ণবী হাসিমুখে কহিল, তোমাকে ডাকচি নতুনগোসাই- রাজী হবে ? আমিও হাসিলাম, বলিলাম, হঁ। রাজী। নাবালক অবস্থায় যে-লোক যাত্রার দলকে ভয় করেনি, সাবালক অবস্থায় তার বোষ্টমীকে ভধু কি ! যাত্রার দলেও ছিলে নাকি ? ईं । তা হলে ত গান গাইতেও পারো । না, অধিকারী অতটা দূর এগোতে দেয়নি, তার আগেই জবাব দিয়েছিল । তুমি অধিকারী হলে কি হ’তে বলা যায় না । বৈষ্ণবী হাসিতে লাগিল, বলিল, আমিও জবাব দিতুম । সে যাক, এখন আমাদের একজন জানলেই কাজ চলে যাবে! এদেশে যেমন-তেমন করেও ঠাকুরের নাম নিতে পারলে ভিক্ষার অভাব হয় না। চলো না গোসাই, বেরিয়ে পড়া যাক । বলেছিলে খ্ৰীবৃন্দাবনধাম কখনো দেখোনি, চলে তোমাকে দেখিয়ে নিয়ে আসি । অনেকদিন ঘরে বসে কাটল, পথের নেশা আবার যেন টানতে চায়। সত্যি, ষাবে নতুনগোসাই ? হঠাৎ তাহার মূখের পানে চাহিয়া ভারি বিস্ময় জন্মিল ; কহিলাম, পরিচয় ও এখনো আমাদের চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়নি, আমাকে এতটা বিশ্বাস হ’লে৷ কি করে ? বৈষ্ণবী কহিল, চব্বিশ ঘণ্টা ত কেবল একপক্ষেই নয় গোসাই, ওটা দু'পক্ষেই । আমার বিশ্বাস, পথে-প্রবাসে আমাকেও তোমার অবিশ্বাস হবে না , কাল পঞ্চমী, বেরিয়ে পড়বার ভারি শুভদিন—চলে । আর পথের ধারে রেলের পথ ত রইলইভাল না লাগে ফিরে এসো, আমি বারণ করব না । একজন বৈষ্ণবী আসিয়া খবর দিল—ঠাকুরের প্রসাদ ঘরে দিয়ে আসা হয়েচে । কমললতা বলিল, চলো, তোমার ঘরে গিয়ে বসি গে। আমার ঘর ? তাই ভাল ।