পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত রাজলক্ষ্মী বাধা দিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ই গা, তাল কাকে বলে ? বলিলাম, তাল তাকে বলে ছেলেবেলায় যা তোমার পিঠে পড়ত। মনে নেই ? রাজলক্ষ্মী কহিল, নেই আবার! সে আমার খুব মনে আছে। কাল খামোকা তোমায় ভীতু বলে অসম্মান করেচি বই ত নয়, কিন্তু কমললতা শুধু তোমার উদাসীমনের খবরটাই পেলে, তোমার বীরত্বের কাহিনীটা শোনেনি বুঝি ? না, আত্মপ্রশংসা আপনি করতে নেই, সে তুমি শুনিয়ো । কিন্তু তার গলা সুন্দর, গান মুন্দর, তাতে সন্দেহ নেই। আমারও নেই। বলিয়াই সহসা তাহার দুই চক্ষু প্রচ্ছন্ন কৌতুকে জলিয়া উঠিল, কছিল, ই গা, তোমার সেই গানটি মনে আছে ? সেই যে পাঠশালায় ছুটি হলে তুমি গাইতে, আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতুম -সেই—কোথা গেলি প্রাণের প্রাণ বাপ দুৰ্য্যোধন রে-এ-এ-এ-এ— হাসি চাপিতে সে মুখে আঁচল চাপা দিল, আমিও হাসিয়া ফেলিলাম। রাজলক্ষ্মী কহিল, কিন্তু বড় ভাবের গান ! তোমার মুখে শুনলে গোরু-বাছুরের চোখেও জল এসে পড়ত–মানুষ ত কোন্‌ ছার। রতনের পায়ের শব্দ পাওয়া গেল । অনতিবিলম্বে সে দ্বারের কাছে দাড়াইয়া বলিল, আবার চায়ের জল চড়িয়ে দিয়েচি মা, তৈরি হতে দেরি হবে না। এই বলিয়া সে ঘরে ঢুকিয় চায়ের বাটিটা হাতে তুলিয়া লইল । রাজলক্ষ্মী আমাকে বলিল, আর দেরি ক’রো না, ওঠে । এবার চা ফেলা গেলে রতন ক্ষেপে যাবে । ওর অপব্যয় সহ হয় না । কি বলিস্ রতন ? রতন জবাব দিতে জানে। কহিল, আপনার না সইতে পারে মা, কিন্তু বাবুর জন্তে আমার সব সয় । এই বলিয়া সে বাটিটা লইয়া চলিয়া গেল। তাহার রাগ হইলে রাজলক্ষ্মীকে সে ‘আপনি বলিত, ন হইলে, ‘তুমি বলিয়া ডাকিত। রাজলক্ষ্মী বলিল, রতন তোমাকে সত্যই বড় ভালোবাসে । বলিলাম, আমারও তাই মনে হয়। ই। কাশী থেকে তুমি চলে এলে ও ঝগড়া করে আমার কাজ ছেড়ে দিলে। রাগ করে বললুম, আমি যে তোর এত করলুম রতন, তার কি এই প্রতিফল ? ও বললে, রতন নেমকহারাম নয় মা । আমিও চললুম বৰ্ম্মায়, তোমার ঋণ আমি বাবুর সেবা করে শোধ দেব। তখন হাতে ধরে, ঘাট মেনে তবে ওকে শাস্ত করি। একটু থামিয়া বলিল, তারপরে তোমার বিয়ের নেমতয়পত্র এলো। বাধা দিয়া বলিলাম, মিছে কথা ব'লে না । তোমার মতামত জানার জন্তে – এবার সেও অামাকে বাধা দিল, কহিল, ইগো হা, জানি । রাগ করে যদি লিধতুম করে গে—করতে ত ? a?