শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ হয়ত ঘরেই মরে থাকতো,-বামুনের ছেলেকে মেথর মুদ্ৰফরাসে টানা হেঁচড়া করত,— এই ভয়ানক সম্ভাবনায় তাহার গায়ে কাটা দিয়া গেল। একটু থামিয়া কহিল,—আমিই কি আর থাকতে পারতাম ? চাকরি ছেড়ে দিয়ে হয়ত চলে যেতে হতো, তারপরে আবার যা-কে তাই । সেই বউদিদির গল্পনা আর মায়ের চোখের জল। আপনিই ত সব । সমস্ত বঁচিয়ে দিয়েচেন । ভারতী বলিল, অথচ, এসেই আমার সঙ্গে ঝগড়া করেছিলেন । অপূৰ্ব্ব লজ্জা পাইয় কহিল, সমস্ত ওই তেওয়ারী ব্যাটার দোষ, কিন্তু মা এসব শুনলে আপনাকে যে কত আশীৰ্ব্বাদ করবেন তা আপনি জানেন না। ভারতী কহিল, কেমন করে জানবো ? মা এগেই ত তবেই তার মুখ থেকে শুনতে পালো ! অপুর্ণ আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিল, ম আসবেন বৰ্খায় ? আপনি বলেন কি ? ভারতী জোর দিয়া কহিল, কেন আসবেন না,—কত লোকেরই ত ম| নিত্য শসচেন । এখানে এলেই কি কারও জাত যেতে পারে নাকি ? অপূৰ্ব্ব ধরে ঢুকিয় সেই আরাম চৌকিটাতেই পুনরায় আসিয়া বসিল। পাশের জানাল দিয়া তাহার মুখে রোদ লাগিতেই ভারতী হাত বাড়াইয়া বন্ধ করিয়া দিয়া কহিল, বৌদিদিরা মাকে তেমন যত্ব করেন না এবং আপনাকে চিরকাল যদি বিদেশে চাকরি করেই কাটাতে হয়, এ-বয়সে তার সেবা কে করবে বলুন ত ? অপূৰ্ব্ব কহিল, মা বলেন ছোট বৌ এসে তার মেধা করবে। ভারতী বলিল, আর সে যদি সেবা না করে! আপনি থাকবেন বিদেশে, বড় জীয়েদের দেখে সে যদি তাদের মতই হয়ে দাড়ায়, মাকে যত্ব না করে কষ্ট দিতেই শুরু করে, কি করবেন বলুন ত ? অপূৰ্ব্ব ভীত হইয়া কহিল, সে রকম কখখনো হবে না। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বংশ ণেকে এসে কিছুতেই মাকে দুঃখ দিতে পারবে না, আপনাকে আমি নিশ্চয় বলচি । নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণের বংশ? এই বলিয়া ভারতী মুচকিয়া শুধু একটু হাসিয়৷ কহিল, এখন থাক, যদি প্রয়োজন হয় ত সে গল্প আপনার কাছে অন্য একদিন করব । ক্ষণকাল নিঃশব্দে থাকিয়া প্রশ্ন করিল, কেবল মাত্র মায়ের সেবা করবার জঙ্গই যাকে বিবাহ ক'রে আপনি ফেলে আসবেন, তাতে কি তার প্রতি অত্যন্ত অবিচার করা হবে না । অপূৰ্ব্ব তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া স্বীকার করিয়া বলিল, তা হবে। ভারতী কহিল, এবং সেই অবিচারের বদলে তার কাছ থেকে নিজে স্থবিচার দাবী করবেন ? ১২ষ্ঠ
