পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SW4 পরদিন অপরাহ্লবেলায় সুমিত্রার নেতৃত্বে ফয়ার-মাঠে যে সভা আহূত হইল তাহাতে লোকজন বেশী জমিল না, এবং বক্তৃতা দিতে যাহার প্রতিশ্রত হইয়াছিলেন র্তাহীদের অনেকেই আসিয়া জুটিতে পারিলেন না। নানা কারণে সভার কার্য্য আরম্ভ করিতে বিলঙ্গ ঘটিল এবং আলোর বন্দোবস্ত না থাকায় সন্ধ্যার অব্যবহিত পরেই তাহ ভাঙিয়া দিতে হইল। স্বমিত্রার নিজের বক্তৃতা ভিন্ন বোধ করি সভায় উল্লেখযোগ্য কিছুই হইতে পাইল না, কিন্তু তাই বলিয়া পথের দাবীর এই প্রথম উদ্যমটিকে ব্যর্থ বলিয়া অভিহিত করা যায় না। কারণ মুখে-মুখে চারিদিকের মজুরদের মধ্যেও যেমন ব্যাপারটা প্রচারিত হইয়া পড়িতে বাকী বুহিল না, তেমনি কারখানার কর্তৃপক্ষদের কালেও কথাটা পৌছতে বিলম্ব হইল না। যেমন করিয়া হৌক, ইহাই সৰ্ব্বত্র রাষ্ট্র হইয়া পড়িল যে, কে একজন বাঙালী স্ত্রীলোক সমস্ত পৃথিবী ঘূরিয়া অবশেষে বৰ্খায় আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন, তাহার যেমন রূপ তেমনি শক্রি । তাহাকে বাধা দেয় কার সাধ্য ! কেমন করিয়া তিনি সাহেবদের কানে ধরিয়া মজুরদের সর্বপ্রকার সুখ-সুবিধা আদায় করিয়া লইবেন এবং তাহাদের মজুরির হার দ্বিগুণ বৃদ্ধি করিয়া দিবেন, নিজের মুখেই সে সকল কথা তিনি প্রকাশ্বে বিবৃত করিয়াছেন । যাহারা খবর না পাওয়ার জন্য সেদিন উপস্থিত হইয়া তাহার নিজের মুখ হইতে সকল কথা শুনিতে পায় নাই তাহারা আগামী শনিবারে গিয়া যেন মাঠে উপস্থিত হয় । - বিশ-পচিশ ক্রোশের মধ্যে যতগুলো কল-কারখানা ছিল এই সংবাদ দাবানলের মত ছড়াইয়া পড়িল । সুমিত্রাকে কয়টা লোক ই বা চোখে দেখিয়াছে, কিন্তু তাহার রূপ ও শক্তির খ্যাতি অতিরঞ্জিত, এমন কি অমান্থধিক হইয়াই যখন লোকের কানে গেল তখন এই অশিক্ষিত মজুরদের মধ্যে সহসা যেন একটা সাড়া পড়িয়া গেল । চিরদিন সংসারে অত্যাচারিত, পীড়িত, দুৰ্ব্বল বলিয়া মানুষের সহজ অধিকার হইতে যাহারা সবলের দ্বারা প্রবঞ্চিত, নিজের উপর বিশ্বাস করিবার কোন কারণ যাহার দুনিয়ায় খুজিয়া পায় না, দেবতা ও দৈবের প্রতি তাহাদের বিশ্বাস সবচেয়ে বেশী। স্বমিত্রার সম্বন্ধে জনশ্রতি তাহাদের কাছে কিছুই অসঙ্গত বলিয়া বোধ হইল না, —এটা প্রায় একপ্রকার স্থির হইয়া গেল যে, একটা রোজ কামাই করিয়া শনিবার দিন ফয়ার-মাঠে হাজির হইতেই হইবে । তাহার কথা ও উপদেশের মধ্যে এমন পল্লশপাথর যদি বা কিছু থাকে যাহা দিয়া দিন-মজুরের দুঃখের কপাল রাতারাতি { S 8ર