পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰছ চেয়েও কোমল। কিন্তু তোমার গুণাকে তুমি বিশ্বাস কর কি করে ? উনি মাতাল হয়ে ত সমস্তই হলে ফেলতে পারেন। ডাক্তার কহিলেন, ওই জ্ঞানটুকুই ওর বাকী থাকে। আর একটা সুবিধা এই যে, ওর কথাই বিশেষ কেউ বিশ্বাসও করে না । ভারতী কহিল, ওর নাম কি দাদা ? ডাক্তার কছিলেন, অতুল, সুরেন, যখন যা মনে আসে । আসল নাম শশিপদ ভৌমিক । আমার মনে হয় উনি নবতারার বড় বাধ্য। ডাক্তার মুচকিয়া হাপিলেন, বলিলেন, আমারও মনে হয়। এই বলিয়া তিনি পরপারের জন্য নৌকার মুখ ফিরাইলেন। স্রোত ও দাড়ের প্রবল আকর্ষণে ক্ষুদ্র তরণী অত্যস্ত দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল এবং দেখিতে দেখিতে এপারে আসিয়া ঠেকিল। চারিদিকেই সাহেব কোম্পানীর বড় বড় কাঠের মাড় স্কুপাকার করা, তাহার ফাকে ফঁাকে জোয়ারের জল ঢুকিয়া দূরবর্তী জাহাজের তীব্র আলোকে ঝিক ঝিক করিতেছে ইহারই একটা ফাকের মধ্যে ডিঙি প্রবিষ্ট করাইয়া দিয়া ডাক্তার ভারতীর হাত ধরিয়া নামিয়া পড়িলেন । পিচ্ছিল কাঠের উপর দিয়া সাবধানে পা টিপিয়া কিছুদূর অগ্রসর হইয়া একটা সঙ্কীর্ণ পথ পাওয়া গেল, আশে-পাশে ছোট-বড় ডোবা, লতা-গুল্ম ও কাটাগাছে পরিপূর্ণ হইয়া আছে, তাহারই একধার দিয়া এই পথ অন্ধকার বনের মধ্যে যে কোথায় গিয়াছে তাহার নির্দেশ নাই । ভারতী সভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, দাদা, ও-পারের এমনি একটা ভয়ঙ্কর স্থান থেকে আর একটা তেমনি ভয়ানক জায়গায় নিয়ে এলে। বাঘ-ভালুকের মত এ-ছাড়া কি তোমরা আর কোথাও থাকতে জানো না ? আর কিছু ভয় না কর সাপের ভয়ট ত করতে হয় ? ডাক্তার হাসিয়া কহিলেন, সাপ বিলাত থেকে আসেনি দিদি—তাদের ধর্শ্বজ্ঞান আছে, বিনা অপরাধে কামড়ায় না । মন্তব্য শুনিয়া ভারতীর আর এক দিনের কথা মনে পড়িল । সেদিনও তাহার এমনি সহাস্ত কণ্ঠস্বরে ইউরোপের বিরুদ্ধে কি অপরিসীম ঘৃণাই প্রকাশ পাইয়াছিল। তিনি পুনশ্চ কছিলেন, আর বাঘ-ভালুক বোন ? কতদিনই ভাবি, এই ভারতবর্ষে মানুষ না থেকে যদি কেবল বাঘ-ভালুকই থাকতো ! হয়ত বিদেশ থেকে শিকার করতে এরা আসতো, কিন্তু এমন অহৰ্নিশি রক্তশোষণের জন্ত কামড়ে পড়ে থাকত না । ভারতী চুপ করিয়া রছিল। সমস্ত জাতি-নির্বিশেষে কাহারও এতখানি বিদ্বেষ তাহাকে অত্যন্ত ব্যথিত করিত। বিশেষ করিয়া এই মানুষটির এতবড় বিশাল ৰক্ষতল হইতে যখন গরল উছলিয়া উঠিত, তখন দুই চক্ষু তাছার জলে পরিপূর্ণ হইয়া ♥ ♥ል