পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/২২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী এই দশ হাজার টাকার ড্রাফট সম্বন্ধে একটা পুরাতন ইতিহাস আছে, তাহ এইখানে বলা প্রয়োজন। তাহার বন্ধু-বান্ধব, শত্ৰু-মিত্র, পরিচিত-অপরিচিত এমন কেহ ছিল না যে অচির ভবিষ্যতে একটা মোটা টাকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা শশীর মুখ হইতে শুনে নাই। কেহ বড় বিশ্বাস করিত না, বরঞ্চ ঠাট্টা-তামাসাই করিত, কিন্তু ইহাই ছিল ওস্তাদজীর মূলধন । ইহারই উল্লেখ করিয়া সে একান্ত অসঙ্কোচে লোকের কাছে ধার চাহিত। এবং শীঘ্রই একদিন স্বদে-আসলে পরিশোধ করিয়া দিবে তাহা শপথ করিয়া বলিত । এই অত্যন্ত অনিশ্চিত অর্থাগমের উপর তাহার কত আশাভরসাই না জড়াইয়া ছিল । বছর পাচ-সাত পূৰ্ব্বে তাহার বিত্তশালী মাতামহ মধন মারা যান তখন দে মাসতুতো ভায়েদের সঙ্গে সম্পত্তির একটা অংশ পাইয়াছিল । এতদিন এইটাই তাহাদের কাছে বিক্রি করিবার কথাবার্তা চলিতেছিল, মাসপানেক পূৰ্ব্বে তাহা শেষ হইয়াছে। ধামের মধ্যে কলিকাতার এক বড় এটর্ণির চিঠি ছিল, টাকাটা দুই-একদিনের মধ্যে পাওয়া যাইবে তিনি লিখিয়া জানাইয়াছেন। ভারতী চিঠি পড়িয়া শেষ করিলে ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশ হাজার টাকার কথা ছিল না শশী ? শশী হাত নাড়িয়া বলিল, আহ, দশ হাজার টাকাই কি সোজা নাকি ? তাছাড়া নিজের মাসতুতো ভাই,—সম্পত্তি ত একরকম আপনার ঘরেই রইল ডাক্তারবাৰু, আর ঠিক সেই কথাই ত মেজদা লিখে জানিয়েছেন । কি রকম লিখেছেন একবার—এই বলিয়া মেজদার চিঠির জন্তে উঠিবার উপক্রম করিতে ডাক্তার বাধা দিয়া বলিল, থাক থাক, মেজদার চিঠির জন্ত আমাদের কৌতুহল নেই। ভারতীকে বলিলেন, এই রকম একটা ক্ষেপা মাসতুতো ভাই আমাদের থাকলে—এই বলিয়া তিনি হাসিতে লাগিলেন । শণী খুশী হইল না, সে প্রাণপণে প্রমাণ করিতে লাগিল যে, সম্পত্তিটা একপ্রকার বিক্রি না করিয়াই এতগুলো টাকা পাওয়া গেল, এবং সে কেবল তার মেজদার মত আদর্শ পুরুষ সংসারে ছিল বলিয়া । ভারতী মুচকিয়া হাসিয়া কহিল, সে ঠিক কথা অতুলবাবু, মেজদাকে না দেখেই তার চরিত্র আমার হৃদয়ঙ্গম হয়েচে । ও আর সপ্রমাণ করবার প্রয়োজন নেই। শশী তৎক্ষণাৎ কহিল, কাল কিন্তু আমাকে আর দশটা টাকা দিতে হবে । তাহলে সেদিনের দশ, কালকের দশ আর অপূৰ্ব্ববাবুর দরুন সাড়ে আট টাকাপুরোপুরি ত্রিশ টাকাই পরও ভরত দিয়ে দেব। নিতে হবে, না বলতে পারবেন न किछ । 4