পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/২৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাৰী যা কিছু প্রাচীন, বা কিছু পবিত্র, সমস্ত নিৰ্ম্মম-চিত্তে ধ্বংস করে ফেলতে ? ডাক্তার বলিলেন, পারি। সেই ত আমাদের ব্রত । পুরাতন মানেই পবিত্র নয় ভারতী । মাস্থ্য সত্তর বছরের প্রাচীন হয়েচে বলেই সে দশ বছরের শিশুর চেয়ে বেশি পবিত্র হয়ে ওঠে না । তোমার নিজের দিকেই চেয়ে দেখ, মামুষের অবিশ্রাম চলার পথে ভারতের বর্ণাশ্রম ধৰ্ম্ম ত সকল দিকেই মিথ্যে হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্ৰিয়, বৈশু, শূত্র, কেউ ত আর সে আশ্রম অবলম্বন করে নেই। থাকলে তাকে মরতে হবে। সে যুগের সে বন্ধন আজ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। তবুও তাকেই পবিত্র মনে করে কে জানো ভারতী ? ব্রাহ্মণ। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকেই মিরতিশয় পবিত্র জ্ঞানে কারা আঁকড়ে থাকতে চায় জানো ? জমিদার । এর স্বরূপ বোঝা ত শক্ত নয় বোন ! ষে সংস্কারের মোহে অপূৰ্ব্ব আজ তোমার মত নারীকেও ফেলে দিয়ে যেতে পারে তার চেয়ে বড় অসত্য আর আছে কি ? আর শুধু কি অপূৰ্ব্বর বর্ণাশ্ৰম ? তোমার ক্রীশ্চান ধৰ্ম্মও আজ তেমনি অসত্য হয়ে গেছে, ভারতী, এর প্রাচীন মোহ তোমাকে ত্যাগ করতে হবে। ভারতী ভীত হইয়া বলিল, যে ধৰ্ম্মকে ভালবাসি, বিশ্বাস করি, তাকেই তুমি ত্যাগ করতে বল দাদা ? ডাক্তার কহিলেন, বলি। কারণ সমস্ত ধৰ্ম্মই মিথ্যা-আদিম দিনের কুসংস্কার। বিশ্ব-মানবতার এতবড় পরম শত্রু আর নেই। ভারতী বিবর্ণমুখে স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল । বস্তৃক্ষণ পরে ধীরে ধীরে বলিল, দাদা, ষেখানেই থাকে, তোমাকে আমি চিরদিন ভালবাসবো, কিন্তু এই যদি তোমার সত্যকার মত হয়, আজ থেকে তোমার আমার পথ একেবারে বিভিন্ন। একটা দিনও আমি ভাবিনি, এত বড় পাপের পথই তোমার পথের দাবীর পথ । ডাক্তার মুচকিয়া একটুখানি হাসিলেন। ভারতী কহিল, আমি নিশ্চয় জানি তোমার এই দয়াহীন নিষ্ঠুর ধ্বংসের পৰে কিছুতেই কল্যাণ নেই। আমার স্নেহের পণ, করুণার পথ, ধৰ্ম্মবিশ্বাসের পথ,— সেই পথই আমার শ্রেয়ঃ, সেই পথই আমার সত্য । তাই তো তোমাকে আমি টানতে চাইনি ভারতী। তোমার সম্বন্ধে ভুল করেছিলেন স্থমিত্র, কিন্তু আমার ভুল একটা দিনও হয়নি। তোমার পথেই তুমি চলগে । স্নেহের আয়োজন, করুণার প্রতিষ্ঠান জগতে অনেক খুঁজে পাবে, পাবে না শুধু পথের দাবী, পাবে না শুধু—বলিতে বলিতে র্তাহার চোখের দৃষ্টি পলকের জন্ত যেন জলিয়াই নিবিয়া গেল। কণ্ঠস্বর স্থির, গভীর। ভারতী ও সুমিত্রা উভয়েই বুঝিল, সব্যসাচীর এই শাস্ত মুখশ্ৰী, এই সংষত, আচঞ্চল ভাষাই সবচেয়ে ভীষণ । १ॐ6 ു-ു