পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী তেওয়ারীর রূঢ়তায় অপূৰ্ব্ব নিজেও তেমনি লজ্জা বোধ না করিয়া পারে নাই । পরের অপরাধে অপরাধী হইয়া এই দুটি অপরিচিত মনের মাঝখানে বোধ করি এইখানেই একটি সমবেদনার সূক্ষ্ম সূত্র ছিল, যাহাকে না বলিয়া অস্বীকার করিতে অপূৰ্ব্বর মন সরিতে ছিল না। হঠাৎ মাথার উপরে প্রতিবেশীদের জাগিয়া উঠার সাড়া নীচে আসিয়া পৌছিল, এবং প্রত্যেক সবুট পদক্ষেপেই সে আশা করিতে লাগিল, এইবার সাহেব তাহার দরজায় নামিয়া আসিয়া দাড়াইবেন । ক্ষমা সে করিবে তাহা স্থির, কিন্তু বিগত দিনের বীভৎসত কি করিলে যে সহজ এবং সামান্ত হইয়া বিবাদের দাগ মুছাইয়া দিবে ইহাই হইল তাহার চিন্তা । কিন্তু মার্জন চাহিবার সময় বহিয়া যাইতে লাগিল। উপরে ছোটখাটো পদক্ষেপের সঙ্গে মিশিয়া সাহেবের জুতার শব্দ ক্রমশঃ মুস্পষ্টতর হইয়া উঠিতে লাগিল, তাহাতে তাহার পায়ের বহর ও দেহের ভারের পরিচয় দিল, কিন্তু দীনতার কোন লক্ষণ প্রকাশ করিল না। এইরূপে আশায় ও উদ্বেগে প্রতীক্ষা করিয়া ঘড়িতে যখন নয়টা বাজিল এবং নিজের নূতন আফিসের জন্য প্রস্তুত হইবার সময় তাহার আসন্ন হইয়া উঠিল তখন শোনা গেল সাহেব নীচে নামিতে শুরু করিয়াছেন। তাহার পিছনে আরও ছুটি পায়ের শক অপূর্ব কান পাতিয়া শুনিল। অনতিবিলম্বে তাহার কপাটের লোহার কড়ার ভীষণ ঝনঝন উঠিল, এবং রান্নাঘর হষ্টতে তেওয়ারী ছুটিয়া আসিয়া খবর দিল, বাবু, কালকের সাহেব ব্যাটা এসে কড়া নাড়চে । তাহার উত্তেজনা কণ্ঠস্বরে গোপন রহিল না । অপূৰ্ব্ব কহিল, দোর খুলে দিয়ে তাকে আসতে বল। তেওয়ারী দ্বার খুলিয়া দিতেই অপূৰ্ব্ব অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠের ডাক শুনিতে পাইল,— এই, তুমহারা সাব কিধৰ্ব ? উত্তরে তেওয়ারী কি কহিল, ভাল শুনা গেল না, খুব সম্ভব সসন্ত্রমে অভ্যর্থনা করিল, কিন্তু প্রত্যুত্তরে সাহেবের আওয়াজ সিড়ির কাঠের ছাদে ধাক্কা খাইয়া যেন হুঙ্কার দিয়া উঠিল, বোলাও ! ঘরের মধ্যে অপূৰ্ব্ব চমকিয়া উঠিল। বাপরে একি অস্থতাপের গল ! একবার মনে করিল সাহেব সকালেই মদ খাইয়াছে, অতএব এ সময়ে যাওয়া উচিত কি-না ভাবিবার পূৰ্ব্বেই পুনশ্চ হুকুম আসিল, বোলাও জলদি । অপূৰ্ব্ব আস্তে আস্তে কাছে গিয়া দাড়াইল । সাহেব এক মুহূৰ্ত্ত তাহার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়া ইংরাজীতে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি ইংরাজী জান ? জানি । আমি ঘুমিয়ে পড়ার পরে কাল তুমি আমার উপরে গিয়েছিলে ? bo