পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের দাবী অপূৰ্ব্ব তৎক্ষণাৎ সায় দিয়া বলিয়া উঠিল, ছিলই ত। মেয়ে নিজে পছন্দ করে মা যখন সমস্ত ঠিক করেছিলেন তখনি আমাকে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হল, সময় হল না। কিন্তু বলে এলাম, মা, যখনি চিঠি লিখবে তখনি ফিরে এসে তোমার আদেশ পালন করব । ভারতী বলিল, তাই ত উচিত । অপূৰ্ব্ব মাতৃস্নেহে বিগলিত হইয়া কহিল, উচিত নয় ? বার-ব্রত করবে, বিচারআচার জামূবে, ব্ৰাক্ষণ-পণ্ডিতের ঘরের মেয়ে হবে,—মাকে কখনো দুঃখ দেবে না,—সেই ত আমি চাই। কাজ কি আমার গান-বাজনা-জানা কলেজে-পড়া বিদুষী মেয়ে ? ভারতী বলিল, দরকার কি ! অপূৰ্ব্ব নিজেই যে একদিন ইহার বিরোধী ছিল এবং বৌদিদিদের স্বপক্ষে লড়াই করিয়া মাকে রাগ করিয়া বলিয়াছিল ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতের ঘর হইতে যাহোঁক একটা মেয়ে ধরিয়া আনিয়া ল্যাঠা চুকাইয়া দিতে, সে-কথা আজ সম্পূর্ণ বিশ্বত হইল। বলিতে লাগিল, দেখুন আপনি আমাদের জাতও নয়, সমাজেরও নয়, জলটুকু পৰ্যন্ত নেওয়া যায় না, ছোয়া-ছুয়ি হলে কাপড়খানা অবধি ছেড়ে ফেলতে হয় এত তফাৎ, তবু আপনি যা বোঝেন আমার দাদার কিংবা বৌদিদিরা তা বুঝতে চান না। যার যা ধৰ্ম্ম তাই ত তাঁর মেনে চলা চাই ? একবাড়ি লোকের মধ্যে থেকেও যে মা আমার একলা, এর চেয়ে হর্ভাগ্য কি আর আছে ? তাই ভগবানের কাছে আমি শুধু এই প্রার্থনা করি, আমার কোন আচরণে আমার মা যেন না কোনদিন ব্যথা পান । বলিতে বলিতে তাহার গলা ভারি হইয়া অশ্রাভারে দুই চক্ষু টলটল করিতে লাগিল । এই সময়ে ঘুমন্ত তেওয়ারী কি একটা শা করিতে ভারতী তাড়াতাড়ি উঠয়। চলিয়া গেল। অপূৰ্ব্ব হাতের উন্ট পিঠে চোখ মুছিয়া ফেলিয়া পুনরায় ফল বানাইতে প্রবৃত্ত হইল। মাকে সে অতিশয় ভালবাসিত এবং বাড়িতে থাকিতে সেই মাকে খুশী রাখিতে সে মাথার টিক হইতে একাদশীর দিনে ভাতের বদলে লুচি খাওয়া অবধি সবই পালন করিয়া চলিত । বস্তুতঃ ব্রাহ্মণ সন্তানের আচারভ্রষ্টতাকে সে নিন্দাই করিত, কিন্তু প্রবাসে আসিয়া আচার-বিচারের প্রতি তাহার এরূপ প্রগাঢ় অহরাগ বোধ হয় তাহার জননীও সন্দেহ করিতে পারিতেন না । আসল কথা এই যে, আজ তাহার দেহ-মন ভয়ে ও ভাবনায় নিয়তিশয় বিকল হইয়াছিল, মাকে কাছে পাইবার একটা অন্ধ আকুলতায় ভিতরে ভিতরে তাহার কুঙ্কটিকার স্বষ্টি করিতেছিল, সেখানে সমস্ত ভাবই যে পরিমাণ হারাইয়া বিকৃত আতিশয্যে রূপান্তরিত হইয়া উঠিতেছিল এ খবর অন্তৰ্য্যামীর অগোচর রহিল না, কিন্তু ভারতীর বুকের মধ্যেটা অপমানের বেদনার একেবারে টন টন করিতে লাগিল । יר