বৈকুণ্ঠের উইল কে তাকে খবর দিলে ? কে যে তাহাকে বাড়ির এই দুঃসংবাদ দিয়াছে, গোকুল নিজেও তাহা জানিত না। মাস্টার মহাশয়ের পুত্র হারাণের সম্বন্ধে তাহার নিজের সন্দেহ জন্সিয়াছিল। তথাপি কেমন করিয়া যেন নি:সংশয়ে বুঝিয়া বসিয়াছিল—বিনোদ সমস্ত জানিয়াশুনিয়াই শুধু লঙ্গ ও অভিমানেই বাড়ি আসিতেছে না। সে মায়ের মুখপানে চাহিয়া কহিল, খবর সে পেয়েচে মা। বাবা চিরকালের মত চলে গেলেন—এ কি সে টের পায়নি? আমার মত তার বুকের ভেতরেও কি হা হা করে আগুন জলে যাচ্ছে না ? সে সব জেনেচে মা, সব জেনেচে । ভবানী ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া অবশেষে যখন কথা কছিলেন, গোকুল আশ্চৰ্য্য হইয়া লক্ষ্য করিল—ময়ের সেই অশ্ৰগদগদ কণ্ঠস্বর আর নেই। কিন্তু তাহাতে উত্তাপও ছিল না । সহজ-কণ্ঠে বলিলেন, গোকুল, তাই যদি সত্যি হয় বাবা, তবে অমন ভায়ের জন্তে তুই আর দুঃখ করিসূনে। মনে কর, আমাদের বংশে আর ছেলেপিলে নেই। যে রাগের বশে মরা বাপ-মায়ের শেষ কাজ করতেও বাড়ি আসে না, তার সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। গোকুল এ অভিযোগের যে কি জবাব দিবে তাহা ভাবিয়া না পাইয়া চুপ করিয়া রহিল। কিন্তু জবাব দিল তাহার স্ত্রী। সে দ্বারের আড়ালে বসিয়া সমস্ত আলোচনাই শুনিতেছিল। সেইখান হইতেই বেশ স্পষ্ট গলায় কহিল, ঠাকুর কি না বুঝেই এমন একটা কাজ করে গেলেন ? তিনি ছিলেন অন্তৰ্য্যামী । তিন-চারদিন ধরে কলকাতার বাসায় ঠাকুরপোকে যখন খুজে পাওয়া গেল না, তখনই ত তিনি তার গুণগান সব ধরে ফেললেন। তার বিষয় তিনি যদি সমস্ত দিয়ে যান, তাতে । আমাদের কেউ ত আর দোষ দিতে পারবে না। তুমি যাই, তাই ভাই ভাই কর, . আর কেউ হলে— - টানটা আসমাপ্তই রহিল। আর কেহ হইলে কি করিত তাহ খুলিয়া বলা এক্ষেত্রে । বড়বোঁ বাহুল্য মনে করিল। কিন্তু ভবানী মনে মনে ভয়ানক আশ্চর্ষ্য হইয়া - গেলেন। কারণ ইতিপূৰ্ব্বে শ্বশুর বর্তমানে বড়বে এরূপ কথা কোনদিন বলে নাই, এমন কি শ্বাশুড়ীর সামনে স্বামীকে লক্ষ্য করিয়া সে কথাই কহে নাই। এই . কয়দিনেই তাহার এতখানি উন্নতিতে তিনি নিৰ্ব্বাক হইয়া রছিলেন। > গোকুলও প্রথমটা কেমন যেন হতবুদ্ধি হইয়া গেল। কিন্তু পরক্ষণেই উন্মুক্ত . দরজার দিকে ডান হাত প্রসারিত করিয়া ভবানীর মুখের পানে চাহিয়া একেবারে ক্ষ্যাপার মত চেচাইয়া উঠিল, শোন মা, শোন ! ছোটলোকের মেয়ের কথা শোন • ১১৭
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১২৭
অবয়ব