পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অথচ গোকুল যে ইহার বাষ্পও না জানিতে পারে, এমন কি তাহাকে সম্পূর্ণ গোপন করিয়াই যে এই ক্ষুদ্রাশয়ের তাহীদের বিষদস্ত বাহির করিয়া দংশন করিয়া ফিরিতেছিল, এ-কথা ভবানীর একবার মনেও হইল না । কিন্তু বধু ত আর সে বধু নাই । সে তৎক্ষণাৎ প্রতু্যত্র করিল, অপমান কে কাকে করেচে, সে কথা দেশশুদ্ধ লোক জানে। আমার নিজের জিনিস যদি আমি চোরের হাত থেকে বাচাবার জন্যে আমার বাপ-ভাইকে তুলে দিতে যাই, তাতে তোমার বুকে শূল বেঁধে কেন মা ? অার একজনের জন্য আর একজনের সর্বনাশ করাটাই কি ভালো ? ভবানী আত্মসংবরণ করিয়া ধীরভাবে বলিলেন, আমি কার সৰ্ব্বনাশ করেচি মা ? বধু কহিল, যাদের করেচ তারাই গাল দিচ্চে। এতে তিনিই বা কি করবেন, আর আমিই বা করব কি ! ষ্টট মারলেই পাটকেলটি খেতে হয়—তাতে রাগ করলে ত চলে না মা । বলিয়া বধু চলিয়া গেল । ভবানী স্তম্ভিত হইয়া কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে নিজের ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িলেন । স্বামীর জীবদ্দশায় তাহার সেই গোকুল এবং সেই গোকুলের স্ত্রীর কথা মনে করিয়া, অনেকদিন পরে আজ আবার তঁহার চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল। আজ আর কোন মতেই মন হইতে এ অনুশোচনা দূর করিতে পারিলেন না যে, নিৰ্ব্বোধ তিনি শুধু নিজের পায়েই কুঠারাঘাত করেন নাই, ছেলের পায়েও করিয়াছেন। অমন করিয়া যাচিয়া সমস্ত ঐশ্বৰ্য্য গোকুলকে লিখাইয়া না দিলে ত এ দুৰ্দ্দশা ঘটিত না । বিনোদ যত মন্দই হোক, কিছুতেই সে জননীকে এমন করিয়া অপমান ও নির্য্যাতন করিতে পারিত না । কিন্তু বিনোদ যে গোপনে উপার্জনের চেষ্টা করিতেছিল তাহা কেহ জানিত না । সে আদালতে একটা চাকরি যোগাড় করিয়া লইয়া এবং শহরের একপ্রান্তে একটা ছোট বাড়ি ভাড়া করিয়া, সন্ধ্যার পর অসিয়া সংবাদ দিল যে, কাল সকালেই সে তাহার নূতন বাসায় যাইবে । ভবানী আগ্রহে বসিয়া বলিলেন, বিনোদ, আমাকেও নিয়ে চল বাবা, এ অপমান আমি আর সইতে পারিনে। তুই যেমন করে রাখবি, আমি তেমনি করে থাকব ; কিন্তু এ-বাড়ি থেকে আমাকে মুক্ত করে দে। বলিয়া তিনি কাদিতে লাগিলেন । তার পর একটি একটি করিয়া সমস্ত ইতিহাস শুনিয়া লইয়া বিনোদ বাহিরে যাইতেছিল, পথে গোকুলের সহিত দেখা হইল । সে দোকানের কাজকৰ্ম্ম সারিয়া ঘরে জাঞ্জিতেছিল। অন্তদিন এ অবস্থায় বিনোদ দূর হইতে পাশ কাটাইয়া সরিয়া X8&