বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নিঃশবে মলিন মখে একধারে গিয়া বসিল । তাঙ্গর চেহারা দেখিলে মনে হয় তাহাকে যেন বলি দেবার জন্যে ধরিয়া আনা হইয়াছে। বঁড়িযোমশাই ছিলেন, কথাটা তিনিই পাড়িলেন । দেখিতে দেখিতে গোকুলের চোখ অরিক্ত হইয়া উঠিল । কহিল, ও, তাই এত, লোক ! যান আপনার নালিশ করুন গে, আমি এক সিকি-পয়সা ওই হতভাগা নচ্ছায়কে দেব না । ও মদ খায় । * আর সকলে মৌন হষ্টয়া রছিলেন । বাড়শোমশাই ভঙ্গি করিয়া হাসিয়া বলিলেন, বেশ, তাই যেন খায়, কিন্তু তুমি ওর চক্কের বিষয় আটকাবার কে ? তুমি যে তোমার বাপের মরণকালে জোচ্চ রি করে উইল লিখে নাওনি তার প্রমাণ কি ? গোকুল আগুনের মত জলিয়া উঠিয়া চীৎকার করিয়া কহিল, জোচ্চ রি করেচি ? আমি জেচ্চোর ? কোন শালা বলে ? গিরিশবাবু প্রাচীন লোক । তিনি মৃদু-কণ্ঠে কহিলেন, গোকুলবাবু, অমন উতলা হবেন না, একটু শান্ত হয়ে জবাব দিন । বঁড়িয্যেমশাই পুরানোদিনের অনেক কথাই নাকি জানিতেন, তাষ্ট চোখ ঘুরাইয় কহিলেন, তা হলে আদালতে গিয়ে তোমার মাকে সাক্ষী দিতে হবে গোকুল । তিনি যা ভাবিয়ছিলেন, ঠিক তাই । গোকুল উন্মত্ত হইয়া উঠিল—কি, আমার মাকে দাড করাবে আদালতে ? সাক্ষীর কাঠগড়ায় ? নি গে যা তোরা সব বিষয়-আশয়–নি গে যা—আমি চাইনে । আমি যাব না আদালতে ; মাকে নিয়ে আমি কাশীবাসী হবো । নিমাই রায়ও উপস্থিত ছিলেন, চোখ টিপিয়া বলিলেন, আহা হা, থাক না গোকুল । কর কি, কি সব বলচ ? গোকুল সে-কথা কানেও তুলিল না। সকলের মুখের সম্মুখে ডান পা বাড়াইয়া দিয়া বিনোদকে লক্ষ্য করিয়া তেমনি চীৎকারে কহিল, আয় হতভাগা, এদিকে আয়, এই পা বাডিয়ে দিয়েচি–ছু য়ে হল—তোর দাদা জোচ্চোর । সমস্ত না এই দণ্ডে তোকে ছেড়ে দিই ত তামি বৈকুণ্ঠ মজুমদারের ছেলে লই । নিমাই ভয়ে শশব্যস্ত হইয়া উঠিল, আহা হা, কর কি বাবাজী ! করুক না ওরা নালিশ–বিচারে যা হয় তাই হবে—এ-সব দিব্যি-দিলেশা, কেন ? চল চল, বাড়ির ভেতরে চল । বলিয়া তাহার একটা হাত ধরিয়া টানাটানি করিতে লাগিলেন । কিন্তু বিনোদ মাথা তুলিয়া চাহিল না, একটা কথার জবাবও দিল না—একভাবে নীরবে বসিয়া রহিল । 》●br