[ বারুই নদীতীরে বীজগাঁ’র জমিদার রাধামােহনের নির্মিত বিলাসভবন শাস্তিকুঞ্জ। সংস্কারের অভাবে আজ তাহা জীর্ণ, শ্রীহীন, ভগ্নপ্রায়। তাহারই একটা কক্ষে তক্তা-পােষের উপর বিছানা, বিছানায় চাদরের অভাবে বহুমূল্য শাল পাতা; শিয়রের দিকে একটা গােল টেবিল, তাহাতে মােটা বাঁধানাে একখানা বইয়ের উপর আধপােড় একটা মােমবাতি। তাহারই পাশে একটা পিস্তল। হাতের কাছে একটা টুল, তাহাতে সােডার বােতল, সুরাপূর্ণ গ্লাস ও মদের বােতল, বােতলটা প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে— পার্শ্বে দামী একটা সোনার ঘড়ি-ঘড়িটা ছাইয়ের আধারস্বরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে - আধপােড়া একখণ্ড চুরুট হইতে তখনও ধুমের রেখা উঠিতেছে। সম্মুখের দেয়ালে গােটা-দুই নেপালী কুকরী টাঙানো, কোণে একটা বন্দুক ঠেস দিয়া রাখা, তাহারই অদূরে মেঝের উপর একটা শৃগালের মৃতদেহ হইতে রক্তের ধারা বহিয়া শুকাইয়া গিয়াছে। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত কয়েকটা শূন্য মদের বােতল। একটা ডিসে উচ্ছিষ্ট ভুক্তাবশেষ তখনও পরিষ্কৃত হয় নাই, ইহারই সন্নিকটে একটা দামী ঢাকাই চাদরে হাত মুছিয়া ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে -সেটা মেঝেতে লুটাইতেছে। জীবানন্দ চৌধুরী বিছানায় আড় হইয়া পড়িয়া। পায়ের দিকের জানালাটা ভাঙ্গা, তাহার ফাক দিয়া বাহিরের একটা গাছের ডালের খানিকটা ভিতরে ঢুকিয়াছে। দুইদিকে দুইটি দরজা-দরজা ঠেলিয়া জীবানন্দের সেক্রেটারী প্রফুল্ল প্রবেশ করিল।]
প্রফুল্ল। সেই লােকট। এখানেও এসেছিল দাদা।
জীবানন্দ। কে বল ত?
প্রফুল্ল। সেই মাদ্রাজী সাহেবের কর্মচারী, যিনি আখের চাষ আর চিনির কারখানার জন্যে সমস্ত দক্ষিণের মাঠটা কিনতে চান। সত্যই কি ওটা বিক্রী করে দেবেন?
জীবানন্দ। নিশ্চয়। আমার এখন ভয়ানক টাকার দরকার।
প্রফুল। কিন্তু অনেক প্রজার সর্বনাশ হবে।
জীবানন্দ। তা হবে, কিন্তু আমার সর্বনাশটা বাঁচবে।
প্রফুল। আর একটি লােক বাইরে বসে আছেন, তাঁর নাম জনার্দ্দন রায়। আসতে বলব?