आईब्रांथी দরওয়ানের লাঠি-সোটা তাহাকে গোপনে তিরস্কার করিল, কিন্তু দুৰ্ব্বলতা প্রকাশ করাও চলে না। বলিল, থাকতে দিতে আপত্তি ছিল না, কিন্তু বাড়িটা আমার নিজের বড় দরকার । যেখানে আছি সেখানে খুব অস্থবিধে, তা ছাড়া আমাদের বাড়ির মেয়ের একবার দেখতে আসতে চান । মেয়েটি বলিল, বেশ ত, আমুন না । বাইরের ঘরগুলোতে আপনি স্বচ্ছন্দে থাকতে পারেন, এবং ভিতরে দোতলায় অনেকগুলো ঘর। মেয়েরা অনায়াসে থাকতে পারেন, কোন কষ্ট হবে না। আর বিদেশে তাদের ত লোকের আবগুক, আমি অনেক কাজ করে দিতে পারব । এবার বিজয় সলজ্জ আপত্তি করিয়া কহিল, না না, সে কি কখনো হতে পারে । র্তাদের সঙ্গে লোকজন সবাই আসবে, তোমাকে কিছুই করতে হবে না। কিন্তু ভিতরের ঘরগুলো কি আমি একবার দেখতে পারি ? উত্তর হইল, কেন পারবেন না, এ ত আপনারই বাড়ি। আইন। ভিতরে ঢুকিয়া বিজয় পলকের জন্য তাহার সমস্ত মুখখানি দেখিতে পাইল । মাথায় কাপড় আছে, কিন্তু ঘোমটায় ঢাকা নয়। পরণে একখানি আধময়লা আটপৌরে কাপড়, গায়ে গহনা নাই, শুধু ছ'হাতে কয়েকগাছি সোনার চুড়ি— সাবেক-কালের । আড়াল হইতে তাহার অশ্রু-সিঞ্চিত কণ্ঠস্বর বিজয়ের কানে বড় মধুর ঠেকিয়াছিল, ভাবিয়াছিল মানুষটিও হয়ত এমনি হইবে। বিশেষত, দরিদ্র হইলেও সে ত বড়ঘরের মেয়ে, কিন্তু দেখিতে পাইল তাহার প্রত্যাশার সঙ্গে কিছুই মিলিল না। রঙ ফর্সা নয়, মাজা শ্যাম । বরঞ্চ একটু কালোর দিকেই । সাধারণ পল্লীগ্রামের মেয়ে, আরও পাচজনকে যেমন দেখতে তেমনি। শরীর কৃশ, কিন্তু বেশ দৃঢ় বলিয়াই মনে হয়। গুইয়া বসিয়৷ ইহার আলন্তে দিন কাটে নাই, তাহাতে সন্দেহ হয় না। শুধু বিশেষত্ব চোখে পড়িল ইহার ললাটে—একেবারে আশ্চৰ্য্য নিখুত গঠন। মেয়েটি কহিল, বিনোদদা, বাবুকে তুমি সব দেখিয়ে আনো, আমি রান্নাঘরে আছি । তুমি সঙ্গে যাবে না রাধুদিদি ? नी । উপরে উঠিয়া বিজয় ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিল । ঘর অনেকগুলি। সাবেক-কালের অনেক আসবাব এখনো ঘরে ঘরে, কতক ভাঙ্গিয়াছে, কতক ভাঙ্গার পথে । এখন তাহাদের মূল্য সামান্তই, কিন্তু একদিন ছিল । সদর-বাটীর মত ঘরগুলিও জরাজীর্ণ, হাড়-পাজরা বার করা। দারিদ্র্যের দাগ সকল বস্তুতেই গাঢ় হইয়া পড়িয়াছে । » ግ »
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৮১
অবয়ব