अछूत्वांथां দিয়া উভয়ের ভোজন-কাৰ্য্য চলিতেছে, তাহাকে দেখিয়া দু’জনেই হ্রস্ত হইয়া উঠিল । অনুরাধ রান্নাঘরের দ্বারের অন্তরালে সারিয়া দাড়াইল । বিজয় জিজ্ঞাসা করিল, ওই কি ওদের খাবার যায়গা নাকি ? কেহ উত্তর দিল না । বিজয় অন্তরালবৰ্ত্তিনীকে উদ্দেশ করিয়া বলিল, আপনার ওপর দেখচি ও খুব অত্যাচার করচে। এবার অনুরাধা মৃদুকণ্ঠে জবাব দিল, বলিল, ই । তবু ত প্রশ্রয় কম দিচ্চেন না-- কেন দিচ্চেন ? না দিলে আরও বেশী উপদ্রব করবে সেই ভয়ে। কিন্তু বাড়িতে ত এ-রকম উৎপাত করে ন! শুনেচি । হয়ত করে না । ওর মা নেই, ঠাকুরমা প্রায়ই শয্যাগত, বাপ থাকেন বাইরে কাজ-কৰ্ম্ম নিয়ে, উৎপাত করবে কার ওপর ? -- বিজয় ইহা জানে না তাহা নয়, তথাপি ছেলেটার যে মা নাই এই কথাটা পরের মুখে শুনিয়া তাহার ক্লেশ বোধ লইল, কহিল, আপনি দেখচি অনেক বিষয় জানেন, কে বললে আপনাকে ? কুমার ? অনুরাধা ধীরে ধীরে কহিল, বলবার বয়েস ওর হয়নি, তবু ওঁর মুখ থেকেই শুনতে পাই। পুরবেলা রোদ রে ওদের আমি বেরাতে দিইনে, তবু ফাকি দিয়ে পালায় । যেদিন পারে না আমার কাছে শুয়ে বাড়ির গল্প করে । বিজয় তাহার মুখ দেখিতে পাইল না, কিন্তু সেই প্রথম দিনটির মত আজো সেই কণ্ঠস্বর বড় মধুর লাগিল ; তাই বলার জন্য নয়, কেবল শোনার জন্যই কহিল, এবার বাড়ি ফিরে গিয়ে ওর মুস্কিল হবে। কেন ? তার কারণ উপদ্রব জিনিসটা নেশার মত । না পেলে কষ্ট হয়, শরীর আই-চাই করে । কিন্তু সেখানে ওর নেশার খোরাক যোগাবে কে ? দু'দিনেই ত পালাই পালাই করবে। আমুরাধা আস্তে আস্তে বলিল, না ভুলে যাবে- কুমার, নেবে এসো বাবা, রুটি নিয়ে যাও । কুমার বাটি হাতে করিয়া নামিয়া আসিল এবং মাসীর হাত হইতে আরও কয়েকটা রুটি ও নারিকেল-নাড়ু লইয়া তাঁহারই গা ঘে সিয়া দাড়াইয়া আহার করিতে লাগিল, গাছে উঠিল না। বিজয় চাহিয়া দেখিল, সেগুলি তাহাদের ধনী-গৃহের তুলনায় পদ-গৌরবে যেমনি হীন হোক, সত্যকার মধ্যাদায় কিছু মাত্র খাটো নয়। কেন যে ছেলেট মাসীর রান্নাঘরের প্রতি এত আসক্ত বিজয় তাহার কারণ বুঝিল । » ፃው
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৮৫
অবয়ব