অম্বুরাধা মা ব্যাপারটা আন্দাজ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কুমার বুঝি তার খুব অমুগত হয়ে পড়েছে ? মেয়েটা খুব যত্ন-মাত্তি করে বুঝি ? বাছা যত্ন ত কখনো পায় না। —বলিয়া তিনি নিজের অস্বাস্থ্য স্মরণ করিয়া নিঃশ্বাস ফেলিলেন । বিজয় বলিল, আমি ছিলুম বাইরের বাড়িতে, ভেতরে কে কাকে কি যত্ব করত দেখিনি, কিন্তু আসবার সময়ে কুমার মাসীকে ছেড়ে কিছুতে আসতে চাইলে না । মার তথাপি সন্দেহ ঘুচিল না, বলিলেন, ওরা পাড়াগায়ের মেয়ে, কত রকম জানে। সঙ্গে না এনে ভাল করিস নি বাবা । বিজয় বলিল, তুমি নিজে পাড়াগায়ের মেয়ে হয়ে পাড়াগায়ের বিরুদ্ধে তোমার এই নালিশ ! শেষকালে তোমার বিশ্বাস গিয়ে পড়ল বুঝি শহরের মেয়ের ওপর ? শহরের মেয়ে ! তাদের চরণে কোটা কোটা নমস্কার!—বলিয়া মা দুই হাত এক করিয়া কপালে ঠেকাইলেন । বিজয় হাসিয়া উঠিল। মা বলিলেন, হাসচিস্ কি রে । আমার দুঃখ কেবল আমিই জানি, আর জানেন তিনি। বলিতে বলিতে র্তাহার চোখ ছলছল করিয়া আসিল, কহিলেন, আমরা যখনকার, সে পাড়াগা কি আর আছে বাবা ! দিন-কাল সব বদলে গেছে । বিজয় বলিল, অনেক বদলেচে, কিন্তু যতদিন তোমরা বেঁচে আছ, বোধ হয় তোমাদের পুণ্যেই এখনো কিছু বাকী আছে মা, একবারে লোপ পাইনি। তারই একটুখানি এবারে দেখে এলুম। কিন্তু তোমাকে যে সে জিনিস দেখাবার জো নেই এই দুঃখটাই মনে রইল।—বলিয়া সে অফিসে বাহির হইয়া গেল । অফিসের কাজের তাড়াতেই ব্যস্ত হইয় তাহাকে চলিয়া আসিতে হইয়াছে। বিকালে অফিস হইতে ফিরিয়া বিজয় ও-মহলে বৌদিদির সঙ্গে দেখা করিতে গেল। গিয়া দেখিল সেখানে বাধিয়াছে কুরুক্ষেত্র কাও । প্রসাধনের জিনিস-পত্ৰ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত, দাদা ইঞ্জিচেয়ারের হাতলে বসিয়া প্রবল-কণ্ঠে বলিতেছেন, কথখনো না । যেতে হয় একলা যাও। এমন কুটুম্বিতেয় আমি দাড়িয়ে-ইত্যাদি । অকস্মাৎ বিজয়কে দেখিয়া প্রভ হাউ মাউ করিয়া কাদিয়া ফেলিল—ঠাকুরপো, তারা যদি সিতাংশুর সঙ্গে জনিতার বিয়ে ঠিক করে থাকে সে কি আমার দোষ । আজ পাকা-দেখা, উনি বলচেন যাবেন না। তার মানে আমাকেও যেতে দেবেন না । Ֆ 3 Sei=st
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২০৩
অবয়ব