হরিলক্ষ্মী হরিলক্ষ্মী কহিল, বলেচে না কি ? কিন্তু আচ্ছা— কি আচ্ছা ? স্ত্রী একটুখানি সন্দেহ প্রকাশ করিয়া বলিল, কিন্তু মেজবে ঠিক ওরকম কথা বড় একটা বলে না। ভয়ানক চালাক কি না ! অনেকে আবার বাড়িয়েও হয়ত তোমার কাছে বলে যায় । শিবচরণ কহিল, আশ্চৰ্য্য নয়। তবে কি-না, কথাটা আমি নিজের কানে শুনেচি । হরিলক্ষ্মী বিশ্বাস করিতে পারিল না, কিন্তু তখনকার মত স্বামীর মনোরঞ্জনের নিমিত্ত সহসা কোপ প্রকাশ করিয়া উঠিল, বল কি গো, এতবড় অহঙ্কার। আমাকে না হয় যা খুশি বলেচে, কিন্তু ভাগুর বলে তোমার ত একটা সন্মান থাকা দরকার ! so শিবচরণ বলিল, হিন্দুর ঘরে এই ত পাঁচজনে মনে করে। লেখাপড়া-জানা বিস্বান মেয়েমানুষ কি-না। তবে আমাকে অপমান করে পার আছে, কিন্তু তোমাকে অপমান করে কারও রক্ষে নেই। সদরে একটু জরুরি কাজ আছে, আমি চললাম। বলিয়া শিবচরণ বাহির হইয়া গেল। কথাটা যে-রকম করিয়া হরিলক্ষ্মীর পাড়িবার ইচ্ছা ছিল তাহা হইল না, বরঞ্চ উন্ট হইয়া গেল। স্বামী চলিয়া গেলে ইহাই তাহার পুন: পুন: মনে হইতে লাগিল । সদরে গিয়া শিবচরণ বিপিনকে ডাকিয়া আনিয়া কহিল, পাঁচ-সা ত বছর থেকে তোমাকে বলে আসছি, বিপিন, গোয়ালটা তোমার সরাও, শোবার ঘরে আমি আর টিকতে পারিনে, কথাটায় কি তুমি কান দেবে না ঠিক করেছে ? বিপিন বিস্ময়াপন্ন হইয়া কহিল, কৈ আমি ত একবারও শুনিনি বড়দা ? শিবচরণ অবলীলাক্রমে কহিল, অস্তুতঃ দশবার আমি তোমাকে নিজের মুখেই বলেfচ । তোমার স্মরণ না থাকলে ক্ষতি হয় না, কিন্তু এতবড় জমিদারী যাকে শাসন করতে হয় তার কথা ভুলে গেলে চলে না। সে যাই হোক, তোমার আপনার ত একটা আক্কেল থাকা উচিত যে, পরের জায়গায় নিজের গোয়াল-ঘর রাখা কতদিন চলে ? কালকেই ওটা সরিয়ে ফেল গে। আমার আর স্ববিধে হবে না, তোমাকে শেষবারের মত জানিয়ে দিলাম । বিপিনের মুখে এমনিই কথা বাহির হয় না, অকস্মাৎ এই পরম বিস্ময়কর প্রস্তাবের সম্মুখে সে একেবারে অভিভূত হইয়া পড়িল। তাহার পিতামহর আমল হইতে ३**
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২২১
অবয়ব