সতী হরিশ সেদিন চুপ করিয়া একধারে বসিয়াছিল। এই স্বল্পভাষী গ্রৌঢ়ের জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য দেখিয়া সে মুগ্ধ হইয়া গিয়াছিল । সুতরাং পিতার অভিমত বাহাই হোক পুত্র তাহার আসন্ন পরীক্ষা-সমুদ্র হইতে মুক্তি পাইবার ভরসায় তাহাকে গিয়া ধরিয়া পড়িল। সাহায্য করিতে হইবে । হরকুমার সম্মত হইলেন । এইখানে তাহার কল্প লাবণ্যের সহিত হরিশের পরিচয় হইল। সেও আই. এ. পরীক্ষার পড়া তৈরী করিতে কলিকাতার গণ্ডগোল ছাড়িয়া পিতার কাছে আসিয়াছিল। সেইদিন হইতে প্রতিদিনই আনাগোনায় হরিশ পাঠ্যপুস্তকের দুরূহ অংশের অর্থই শুধু জানিল না, আরও একটা জটিলতর বস্তুর স্বরূপ জানিয়া লইল যাহা তত্ত্ব হিসেবে ঢের বড়। কিন্তু সে-কথা এখন থাকৃ। ক্রমশঃ পরীক্ষার দিন কাছে ঘেষিয়া আসিতে লাগিল, হরিশ কলিকাতায় চলিয়া গেল। পরীক্ষা সে ভালই দিল এবং ভাল করিয়াই পাশ করিল। কিছুকাল পরে আবার যখন দেখা হইল, হরিশ সমবেদনায় মুখ পাংশু করিয়া প্রশ্ন করিল, আপনি ফেল করলেন যে বড় ? লাবণ্য কহিল, এইটুকুও পারব না, আমি এতই অক্ষম ? হরিশ হাসিয়া ফেলিল, বলিল, যা হবার হয়েচে, এবার কিন্তু খুব ভাল করে একজামিন দেওয়া চাই । লাবণ্য কিছুমাত্র লজ্জা পাইল না, বলিল, খুব ভালো করে দিলেও আমি ফেল হবে । ও আমি পারব না । হরিশ অবাক হইল, জিজ্ঞাসা করিল, পারবেন না কি রকম ? লাবণ্য জবাব দিল, কি-রকম আবার কি ? এমনি । এই বলিয়া সে হাসি চাপিয়া দ্রুতপদে প্রস্থান করিল। ক্রমশঃ কথাটা হরিশের মাতার কানে গেল । সেদিন সকালে রামমোহনবাবু মোকদ্দমার রায় লিখিতেছিলেন । যে দুর্ভাগ৷ হারিয়াছে তাহার আর কোথাও কোন কুল-কিনারা না থাকে, এই শুভ-সঙ্কল্প কার্য্যে পরিণত করিতে রায়ের মুসাবিদায় বাছিয়া বাছিয়া শব্বযোজনা করিতেছিলেন, গৃহিণীর মুখে ছেলের কাও শুনিয়া তাহার মাথায় আগুন ধরিয়া গেল। হরিশ নরহত্যা করিয়াছে শুনিলেও বোধ করি তিনি এতখানি বিচলিত হইতেন না । দুই চক্ষু রক্তবর্ণ করিয়া কহিলেন, কি ! এত বড়— ইহার অধিক কথা উাহার মুখে আর যোগাইল না। দিনাজপুরে থাকিতে একজন প্রাচীন উকিলের সহিত র্তাহার শিখার গুচ্ছ, গীতার মৰ্ম্মার্থ ও পেঙ্গনাস্তে vকাশীবাসের উপকারিতা লইয়া অত্যন্ত মতের মিল ও হৃষ্ঠতা ፵፭ )
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৩১
অবয়ব