পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/২৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জঙ্কিয়াছিল, একটা ছুটির দিনে গিয়া তাহারই ছোটমেয়ে নিৰ্ম্মলাকে আর একবার চোখে দেখিয়া ছেলের বিবাহের পাকা কথা দিয়া আসিলেন ! মেয়েটি দেখিতে ভাল ; দিনাজপুরে থাকিতে গৃহিণী তাহাকে অনেকবার দেখিয়াছেন, তথাপি স্বামীর কথা শুনিয়া গালে হাত দিলেন–রল কি গো, একেবারে পাকা কথা দিয়ে এলে ? আজকালকার ছেলে— কৰ্ত্ত কহিলেন, কিন্তু আমি ত আজকালকার বাপ নই ? আমি আমার সেকেলে নিয়মেই ছেলে মানুষ করতে পারি। হরিশের পছন্দ না হয় তাকে আর কোন উপায় দেখতে ব'লো । গৃহিণী স্বামীকে চিনিতেন, তিনি নিৰ্ব্বাক হইয়া গেলেন । কৰ্ত্ত পুনশ্চ বলিলেন, মেয়ে ডানা-কাট পরী ন হোক ভদ্রঘরের কন্যা । সে যদি তার মায়ের সতীত্ব আর হিন্দুয়ানী নিয়ে আমাদের ঘরে আসে, তাই যেন হরিশ ভাগ্য বলে মানে । খবরটা প্রকাশ পাইতে বিলম্ব হইল না । হরিশও শুনিল । প্রথমে সে মনে করিল, পলাইয়া কলিকাতায় গিয়া কিছু না জুটে, টিউশনি করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিবে। পরে ভাবিল সন্ন্যাসী হইবে । শেসে পিতা স্বৰ্গ: পিতা ধর্ম পিতাহি পরমং তপঃ-ইত্যাদি স্মরণ করিয়া স্থির হইয়া রহিল । কন্যার পিতা ঘটা করিয়া পত্র দেখিতে আসিলেন, এবং আশীৰ্ব্বাদের কাজটাও একসঙ্গে সারিয়া লইলেন। সভায় সহরের বহু সন্ত্রাস্ত ব্যক্তিই আমন্ত্রিত হইয়া আসিয়াছিলেন, নিরীহ হরকুমার কিছু না জানিয়াই আসিয়াছিলেন। তাহাদের সমক্ষে রায়বাহাদুর ভাবী বৈবাহিক মৈত্র মহাশয়ের হিন্দুধর্শ্বের প্রগাঢ় নিষ্ঠার পরিচয় দিলেন, এবং ইংরাজী-শিক্ষার সংখ্যাতীত দোষ কীৰ্ত্তন করিয়া অনেকটা এইরূপ অভিমত প্রকাশ করিলেন যে, তাহাকে হাজার টাকার মাহিনীর চাকুরি দেওয়া ব্যতীত ইংরেজের আর কোন গুণ নাই। আজকাল দিনক্ষণ অন্যরূপ হইয়াছে, ছেলেদের ইংরাজী না পড়াইলে চলে না। কিন্তু যে মূর্খ এই মেচ্ছ-বিদ্যা ও স্লেচ্ছসভ্যতা হিন্দুর শুদ্ধান্তঃপুরে মেয়েদের মধ্যে টানিয়া আনে তাহার ইহকাল ও নাই পরকালও নাই । এক হরকুমার ভিন্ন ইহার নিগুঢ় অর্থ কাহারও অবিদিত রহিল না ; সেদিন সভা ভঙ্গ হইবার পূৰ্ব্বেই বিবাহের দিন স্থির হইয়া গেল এবং যথাকালে শুভকৰ্ম্ম সমাধা হইতেও বিঘ্ন ঘটিল না । কস্তাকে শ্বশুর-গৃহে পাঠাইবার প্রাক্কালে মৈত্ৰগৃহিণী— নিৰ্ম্মলার সতী-সাধী মাতাঠাকুরাণী—বধু-জীবনের চরম তত্ত্বটি মেয়ের কানে দিলেন, १३३